রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: স্থায়ী ক্যাম্পাস আর কত দূর?

মো. জাবেদ ইকবাল
মো. জাবেদ ইকবাল  © ফাইল ছবি

দেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইনিভাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৬ সালে, আর অ্যাকাডেমিকভাবে ২০১৮ সালে। শুরুতে ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শাহজাদপুরের তিনটি কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, প্রতিষ্ঠার পর আট বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিজস্ব অবকাঠামো বা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হয়নি। নিজস্ব ক্যাম্পাস ছাড়াই বিভিন্ন কলেজের ভবনে ও ভাড়া করা ভবনে (যা পূর্বে ছিল পার্টি সেন্টার) চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম। 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, পরীক্ষার হল, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সংকট রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ থেকে। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সেশনজট বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা থেকে; শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও বিঘ্নিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষাদান প্রক্রিয়া।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি প্রদত্ত স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায় যে, গত ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম ৯ হাজার ২৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলিত ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে দাখিল করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পরবর্তী আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ বার প্রকল্পের আকার ও ব্যয় সংশোধিত করে পুনর্গঠিত ডিপিপি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ইতোপূর্বে প্রকল্পের আকার ও ব্যয় হ্রাসকরণ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দুইবার সংশোধিত ডিপিপি উপস্থাপন করে- যা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে।

স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে গত বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, স্মারকলিপি পেশ, মানববন্ধন আয়োজন, গণসংযোগ ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং তা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্লাস বন্ধ থাকায় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার ৬০০ ঘণ্টা অ্যাকাডেমিক ক্লাস আওয়ার ও ২৭২ ঘণ্টা টিচিং আওয়ার। অতিরিক্ত ও প্রশাসনিক কর্মঘণ্টার হিসাব উল্লেখ না-ই করলাম। 

আরো পড়ুন: দু’দফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি ইবির মেগা প্রকল্প, বাড়ল তৃতীয়বার

এই বিপুল পরিমাণ সময় নষ্ট হওয়ার ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে? করোনাকালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম- যার ফলে একটি সেশনজটহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়ছে সেশনজটের। যদিও বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও দক্ষ নির্দেশনায় সকল বিভাগ সেশনজট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।  

মুসলিম জাগরণের কবি ফররুখ আহমদের পাঞ্জেরির কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?’ উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতীয় নীতিনির্ধারকদের নিকট আমাদের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হতে আর কত দেরি?’ গীতিকার আবিদ আনোয়ারের ‘লালন তোমার আরশী নগর/ আর কত দূর আর কত দূর’ গানের পঙক্তিদ্বয়ের ন্যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর কত দিন আক্ষেপ করতে হবে এই বলে, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় তোমার স্থায়ী ক্যাম্পাস/ আর কত দূর আর কত দূর।’

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিকে মেনে নিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যম্পাস নির্মাণের জন্য আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence