নতুন বাংলাদেশ, নতুন সম্ভাবনা

শামীম হামিদী
শামীম হামিদী  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশে সফর যেন পরিবর্তনেেই ইঙ্গিতবাহী এক ঘটনা। সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক চায় ভারত।' 

তবে বাস্তবতা হলো, এই সম্পর্ক এখন আর কেবল সরকার বা কোনো নির্দিষ্ট দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাংলাদেশের জনগণের চেতনায় গভীরভাবে প্রোথিত।

গত কয়েক বছর ধরে ভারতের নীতি ও কার্যক্রমে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল,  ভুটান-সব দেশের মধ্যেই ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। বাংলাদেশে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ভারতের পছন্দের নেতৃত্বের পতন যেন এই প্রতিরোধে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বাংলাদেশের নতুন অবস্থান

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এখন নতুন নেতৃত্বের অধীনে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ড. ইউনূস তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরুণদের উদ্ভাবনীশক্তি ও প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও সুশাসিত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ

ভারতের জন্য এই পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় বাংলাদেশের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখা ভারত এখন নিজেই কোণঠাসা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মণিপুর, মিজোরামসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ভারতের ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনিসংকেত।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ভুয়া প্রচারণা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি আরও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। একই সঙ্গে, বাংলাদেশে ভারতের পছন্দের দল আওয়ামী লীগের পতন ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও দুর্বল করেছে। 

ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। গণতন্ত্র, সুশাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশটি এক নতুন পরিচয় তৈরি করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়ন এবং একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের প্রচেষ্টা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

তাই ভারতের জন্য একটি সময়োপযোগী বার্তা হল দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে ভারতকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে হবে। আধিপত্যবাদী নীতি ত্যাগ করে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই ভারতের।

ঐক্য, গণতন্ত্র ও সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন তার নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলছে। আর এই পরিবর্তন পুরো অঞ্চলের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে।

ড.শামীম হামিদী

বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ