ভুল পথে অন্তবর্তীকালীন সরকার!

সাইদুর রহমান
সাইদুর রহমান  © টিডিসি ফটো

ভুল পথে ধাবিত হচ্ছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার। বিগত তিনমাসে সরকারের কর্মকাণ্ডে বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বিশেষ করে এই সরকার ফ্যাসিবাদ চক্র নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে কিছু কিছু জায়গায় পুনর্বাসিত করেছে। সরকারের পরামর্শক হিসেবে জামায়াত ইসলামীর অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততা ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে কলামিস্ট ফরাহাদ মাজহার, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, ডাক্তার পিনাকি ভট্টাচার্যদের পরামর্শ সরকারের সাথে প্রধান স্টেক হোল্ডারদের দূরত্ব তৈরি করছে। 

সরকারের অতিমাত্রায় ইসলামপন্থীর দিকে ঝুঁকি পড়া উদ্বিগ্নতা বাড়িয়েছে। তিন মাস বয়সী সরকারের ভিতরেই এক ধরনের অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেননা ইতিমধ্যে তিন দফা সরকারের উপদেষ্টাদের দফতর পরিবর্তন করতে হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে না পারাও সরকারের দুর্বলতার অংশ। সর্বশেষ ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধান ভালোভাবে নিচ্ছে না প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এটিও সরকারকে বুঝতে হবে। 

সংশ্লিষ্টরা অনেকেই বলছেন, সরকারের লক্ষ্যহীন যাত্রার সঙ্গীদের বিভ্রান্তিকর বার্তা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। অন্দরমহলের খবর হলো ছাত্রদের পক্ষ থেকে  কিংস পার্টি গঠনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভায় প্রশাসকের একটি অংশ ছাত্র প্রতিনিধি বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রায় ৬০ শতাংশ স্থানীয় সরকারে ছাত্রদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করবার মিশন হাতে নেয়া হয়েছে। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যাদেরকে দেখছি বা আছে তারা আবার একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আদর্শের অনুসারী। 

রাষ্ট্র সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি জনগণ। সরকারকে বুঝতে হবে তারা অন্তবর্তীকালীন। তাদের হাতে জনগণের কোন ম্যান্ডেড নেই। জনগণের ম্যান্ডেড ছাড়া বড় বড় সিদ্ধান্ত কৌশলগত নেতিবাচক হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকার সুপারিশ করতে পারে। সেটি বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। রাজনৈতিক সরকার এবং বর্তমান সরকারের ক্ষমতা উৎস সম্পর্কে আগে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলের শক্তি জনগণ। তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার উৎস মুক্তিকামী রাজনৈতিক দল বা পক্ষগুলি। 

বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে গেছে। নির্বাচন ইস্যুতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধধ করে দিয়েছে। প্রতিবছর ৩৫ লাখ বাংলাদেশি ভারত গমন করতো। দিনে প্রায় ১০ হাজার। সেটি এখন দিনে এক হাজারের নেমে এসেছে। সামনে ক্যান্সার রোগী ছাড়া কাউকে ভিসা দেবে না ভারত সরকার। এছাড়াও বাণিজ্যিক চাপতো আছেই। সরকারকে স্টেক হোল্ডারগুলো নির্বাচনে চাপ প্রয়োগ করলেও তারা কর্ণপাত করছে না। এখনো পর্যন্ত নির্বাচন ইস্যুতে স্পষ্ট করে নিজেদের অবস্থান জানাতে পারেনি সরকার। 

আদালত সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে অনেক জায়গায় নিজেদের অবস্থানও অপষ্ট। সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ায় বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী বিগত ৭ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন না হওয়াটাও অবৈধ। সেখানে সরকারের কি ব্যাখ্যা তাও জনগণকে জানানো হয়নি। এভাবে ইচ্ছেমতো কোন সরকার পরিচালিত হতে পারে না। 

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা কেন জরুরি

বিগত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর যে সরকার গঠিত হয় সেই সরকারের কাছে জনগণের অগাধ প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশায় ফাটল ধরেছে। বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা চিরতরে তুলে দিয়েছিলো। একনায়তন্ত্র চালু করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিলো। সেই জনগণ ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। জনগণ ভোট দিতে চায়। সেই ভোটের পথে এখনো অগ্রসর হয়নি সরকার। বর্তমান সরকারকে জনগণের চোখের, মুখের ভাষা বুঝতে হবে। 

ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছিলো নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায়। সেই প্রত্যাশা থেকে লাইনচ্যুত ক্ষমতাসীনরা। সরকার ব্যর্থ হলে বিপদে পড়বে জনতা। বিপদে পড়বে মুক্তিকামী রাজনৈতিক দলগুলো। বিপদ হবে সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও। আশা করবো নির্বাচনী ট্রেনে উঠে সঠিক পথে অগ্রসর হবে সরকার। অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে নির্বাচন একমাত্র বিকল্প। তাছাড়া বর্তমান সরকারের সেইফ এক্সিটের জন্য দরকার নির্বাচিত সরকার। এজন্য সরকারের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা করা। 

লেখক: রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক


সর্বশেষ সংবাদ