পিইসি-জেএসসি চালু করে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল ‘পরীক্ষা খুব ভালো জিনিস’

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

১৯৯৫ সালের কথা। আমি তখন লন্ডনে বাস করি। সেই সময় ইংল্যান্ডের ব্রাইটলিংসিতে অনুষ্ঠিত পশু অধিকার সমর্থকদের একটি সিরিজ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। যেটা এখন "Battle of Brightlingsea" হিসাবে পরিচিত। এই আন্দোলন যখন ব্রাইটলিংসি শহরে চলছিল তখন লন্ডনের "প্রতিবাদের সিম্বল" হিসাবে খ্যাত "ট্রাফালগার স্কয়ারেও" একটি প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছিল। 

আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডসহ গ্রেট ব্রিটেনের নানা জায়গা থেকে গাঁটের পয়সা খরচ করে বাসে প্লেনে ট্রেনে করে এসে যোগ দিয়েছে। পশু প্রেম তাদের সেইরকম। কথায় আছে "'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর"! আমাদেরতো মানুষের জন্যই কোন প্রেম, ভালোবাসা, মমতা দরদ ইত্যাদি কিছুই নাই।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা কীভাবে থাকে তা নিজ চোখে একটু দেখুন। এরকমভাবে থাকতে গিয়েও কারো কৃপা পেতে হয়। সেই কৃপা পেতে গেস্ট রুম টর্চার নামক এক অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়।

যারা আগামীর বাংলাদেশ গড়বে তারা যে বছরের পর বছর ধরে এরকম অমানবিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় থাকছে, অত্যাচারিত হচ্ছে কোথাও কোন প্রতিবাদ আছে? না আমরা শিক্ষকরা প্রতিবাদ করছি, না করছে দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, না করছে অভিবাবক বা সাধারণ মানুষ।

একজন ছাত্রের ন্যূনতম চাহিদা হলো একটা বিছানা এবং একটা পড়ার টেবিল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের এটুকু দিতে পারলাম না? অথচ গতকাল পত্রিকায় দেখলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভবন উদ্বোধনেই সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছে!

দেখি আমাদের এমপি, মন্ত্রী, আমলারা কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েন। আমলাদের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আবাসিক বহুতল ভবন বানানো হয়। খোদ ঢাকাতেই আছে অনেকগুলো, যেগুলোতে থাকার মানুষ নেই। আর এইদিকে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ঘুমানোর জায়গা পায় না। শিফট করে ঘুমায়। ভালো মানের খাবার পায় না।

যেই দেশে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন অমানবিকভাবে থাকে সেই দেশের সরকার যখন শিক্ষা নিয়ে কোন প্রজেক্ট করে তখন কিভাবে তাদের কথা বিশ্বাস করি? তারা তো দুদিন আগেই পিইসি ও জেএসসি নামক দুটি পরীক্ষা চালু করে আমাদের জ্ঞান দিচ্ছিল যে পরীক্ষা খুব ভালো জিনিস। আর আজকে ঠিক তার উল্টোটা। 

এখন এই দুটো তো বাদ দিচ্ছেই, সাথে বৃত্তি পরীক্ষাও বাদ দিচ্ছে। অথচ এই বৃত্তি পাওয়া ছেলেমেয়েরা বৃত্তির অর্থ পেত এবং বিনামূল্যে স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ পেত। এখন সেটাও কেড়ে নিচ্ছে।

আপনারা সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করে ফেল করেছেন। আপনারা জিপিএ-৫ এর বাম্পার ফলনের মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো করার যে আনন্দ সেই আনন্দকে কেড়ে নিয়েছেন। এই ৫২ বছরে আমাদের সরকার সেন্ট জোসেফ, নটর ডেম, হলিক্রসের মত স্কুল বা কলেজ তৈরী করতে পারলো না।

তাহলে আপনাদের কথা কীভাবে বিশ্বাস করি যে নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের মঙ্গল করবে? এই পর্যন্ত ৫২ বছরে একটা বিশ্বাসযোগ্য করেছেন যা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল হয়। আর শিক্ষকদের সাথে কি করেন সেটাতো আরেক করুন অধ্যায়।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ