‘ইদে হলে থেকে যাওয়াদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নৈতিক দাবি’

তাহমিদ তাজওয়ার
তাহমিদ তাজওয়ার  © ফাইল ছবি

এ সপ্তাহ পার হলেই শুরু হচ্ছে ইদের ছুটি। নাড়ির টানে ঘরে ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পরিবারের বন্ধন দূরে রেখে এসে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নামক পরিবারে অপরিচিত মুখগুলোই হয়ে উঠে আপন। সত্তার সমষ্টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে রূপান্তরিত হয় একক সত্তায়। হাসি-কান্না, বিরহ-বেদনা ভাগাভাগি করে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠে একে অপরের পরিপূরক। ক্লাসমেট, বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র, শিক্ষকেরাই হয়ে উঠে এখানকার  একে অপরের আত্মার অংশ। 

তবে তা কখনও প্রগাঢ় এবং গভীর হতে পারেনা পরিবারের বন্ধনের তুলনায়। তাই তো শিক্ষার্থীদের নাড়ির টানে ঘরে ফেরা। মাসের পর মাস বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনদের প্রতীক্ষা... কখন ঘরে ফিরবে তাদের ভালোবাসার সন্তানটি? কখন অবলোকন করবে সে প্রিয়মুখ? কখন মমতার আলিঙ্গনে পূর্ণ করবে অতৃপ্ত অনুভূতি? সে এক সুন্দর, সুষমাময় দৃশ্যই বটে! 

তবে এর বিপরীতেও রয়েছে আরেক দৃশ্যপট। যা আমরা অনেকেই দেখিনা। কিংবা দেখে থাকলেও সেভাবে বোধ করতে পারিনা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ইদের ছুটিতে আবাসিক হলগুলো খোলা থাকে। ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে। শূন্য, নীরব হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসে শুধু শুনতে পাওয়া যায় বাতাসে হেলতে থাকা গাছের ডাল আর পাতাগুলোর আন্দোলিত হবার শব্দ আর পাখিদের কিচিরমিচির। চারদিকে শূন্যতা!

এরকম অবস্থায়ও হলগুলোর কিছুকিছু রুমে শুনতে পাওয়া যায় পায়ের আওয়াজ। কিছু শিক্ষার্থী রয়ে যায় বাস্তবতার পেরেক সদৃশ আঘাত হৃদয়ে সহ্য করে। একে তো কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক বিভাগেই জটের সৃষ্টি থেকে সময়ের মধ্যে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা নিয়ে  হতাশা তৈরি হয়েছে, তারওপর অনেক আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারগুলোতে ইদের দিন হয় সাধারণ বাকি দশদিনের ন্যায় একটা দিন। সেখানে সন্তানের বেকারত্ব এক অভিশাপের নামান্তর। যার দরুণ একটি করুন অবস্থার স্বীকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী থেকে যায় হলেই। একাকীত্বে পার করে ইদের আনন্দ। অনেকের ভাগ্যে ইদের দিনও জোটেনা ভালো খাবার। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মতন। আর এখানকার শিক্ষকেরা এই পরিবারের অভিভাবক। এক মাস সিয়াম সাধনা করে যে নৈতিক শিক্ষা অর্জিত হয়েছে এবং অভিভাবক হিসেবে বিবেকের কাছে যে দায়বদ্ধতা রয়েছে সে জায়গা থেকে ঈদে হলে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ভালো খাবারের আয়োজন করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্বের মাঝেই পড়ে। যেসব শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারে ইদ কাটিয়ে থাকেন, তারা চাইলেই কমপক্ষে হলে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে পারেন। সেসব শিক্ষকদের হাসিমুখে দুটো কথা বলাও ইদে শিক্ষার্থীদের কাছে বড়ো এক প্রাপ্তির মতন ব্যাপার হবে।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার দরুণ ইদ উপলক্ষে ঈদের দিন হলে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো মানের খাবার ব্যবস্থা করলে অন্তত মানসিকভাবে একাকীত্ব এবং ভঙ্গুর অবস্থা কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। এই যান্ত্রিক যুগে একাকীত্ব বড়ো এক সমস্যা। ফলস্বরূপ কয়দিন পরপরই আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে, ইদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের এতটুকু প্রয়াসও ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করবে। যা প্রজন্মের মাঝে নৈতিক এবং আদর্শিকভাবে শক্ত অবস্থান গঠনে ভূমিকা রাখবে।

লেখক: শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ