বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি: কী ভাবছেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা?
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২৭ PM , আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২৭ PM
সম্প্রতি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ়।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি করতে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এই নিয়ে গত সপ্তাহখানেক থেকেই বিরাজ করছে নানা বিতর্ক আর উত্তেজনা। পক্ষে বিপক্ষে মতামত তুলে ধরছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। আবার বলা হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মূল ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকার সুবিধাই নিচ্ছে কুচক্রি মহল।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে। তারা তাদের যৌক্তিক মতামত তুলে ধরেছেন।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান ফারুক জানান, বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির প্রথম দিককার ইতিহাস এবং ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সম্প্রতি দেখেছি ছাত্ররাজনীতি তার ঐতিহ্য এবং মতাদর্শ থেকে স্খলিত হয়ে পড়েছে। মূলত বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি সহিংসতা নির্ভর এবং নির্দিষ্ট কোন রেজিমকে টিকিয়ে রাখার উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার। এছাড়াও আমরা বর্তমানে কোন ছাত্ররাজনীতি নির্ভর প্রতিষ্ঠানকে ছাত্র-ছাত্রীদের কোন দাবি-দাওয়া আদায়ে খুব বেশি সুসংগঠিত হতে দেখি নি। অনেকেই ছাত্ররাজনীতিকে উচ্চশিক্ষার অন্তরায় হিসেবেও চিহ্নিত করেন এবং নিরাপত্তার কথা ভেবেই উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে গ্রহণ করেন। এমন অবস্থায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির প্রবেশ প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত, যা মোটেও কাম্য নয়। সুতরাং, সংস্কার ব্যতিরেকে ছাত্ররাজনীতির মতো যেকোন সহিংসতা প্রধান প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ কিংবা বন্ধ করাটা এক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।
তবে ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান অমি। তিনি জানান, একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হোক সেটা পাবলিক কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে ছাত্র রাজনীতির চল থাকাটা জরুরি। কেননা, শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া ঘটাতে পারবে। এমনকি দেশের জাতীয় রাজনৈতিক কিংবা সকল সামাজিক শৃঙ্খলে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের অংশীদারত্বের প্রতি সোচ্চার থাকবেন। কেননা বাংলাদেশের সকল জাতীয় প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সব সময়ই যুগান্তকারী অবদান হিসেবে গণ্য হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়ার সাথে প্রশাসনের মেলবন্ধনেও ছাত্র রাজনীতি যুগোপযোগী ভূমিকা রাখতে পারে। সেখান থেকেই আমার মনে হয় দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই সুস্থ স্বাভাবিক ধারার ছাত্র রাজনীতির ব্যাপক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে৷
এ বিষয়ে ঢাবির নবীন এক শিক্ষার্থী তার মতামত জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করা উত্তম। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান উৎপাদনের আধার। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও যদি ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেখানকার বিদ্যমান পড়াশোনার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করবে। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জ্ঞানচর্চার পরিবর্তে লেজুড়বৃত্তি চর্চাকেন্দ্রে পরিণত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির এক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে বলন ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশ সেরা বিদ্যাপীঠে ছাত্ররা জ্ঞান আহরণে না যতটা সময় দেয় তার চেয়ে অধিক সময় দেয় রাজনৈতিক প্রোগ্রাম-গেস্টরুম লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে। এর ফলে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য ও বিনষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে প্রশাসন ও সরকারের সাথে দর কষাকষি করার জন্য ছাত্র রাজনীতি নয় বরং ডাকসুর মতো ছাত্র সংসদ প্রয়োজন যেখানে শিক্ষার্থীদের ভোটে ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্রদের সুবিধা নিয়ে প্রশাসন ও সরকারের সাথে কথা বলতে পারবে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন দ্বারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হয় এতে করে অন্য মতাদর্শীরা অংশগ্রহণের সুযোগটি থাকে না। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পলিটিসাইজড হয়ে যায় এবং ওই ছাত্রনেতারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে মিটিং, মিছিল, দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেই সময় কাটান যার ফলে ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য অধরাই থেকে যায়।