১১ জুলাই মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস

সেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছিল একে একে ৪২ স্কুলছাত্রের প্রাণ

নিহত ছাত্র ও তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ
নিহত ছাত্র ও তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ  © সংগৃহীত

সোমবার ১১ জুলাই। মিরসরাই ট্র্যাজেডির ১১তম বার্ষিকী। ২০১১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখে শিক্ষার্থীরা ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাইয়ে আবু তোরাব সড়কে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবার পানিতে উল্টে যায়। এতে ৪২ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৪ জন নিহত হয়।

নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪ জন ছিল আবু তোরাব উচ্চবিদ্যালয়ের এবং বাকিরা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর শোকার্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশি-বিদেশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফলে দুর্ঘটনাটি সারা বিশ্বে আলোচিত হয়। সেই থেকে ১১ জুলাই দিনটি ‘মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

সোমবার মিরসরাই ট্র্যাজেডির ১১তম বর্ষপূর্তিতে নানা আয়োজনে স্মরণ করা হলো ৪৪ নিহতকে। নিহতদের স্মরণে আজ দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক–স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। বেলা ১১টায় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ ও ‘অন্তিম’–এ ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণ করার পাশাপাশি কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের পক্ষ থেকে ফুল দেয় কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাবেদ উর রহমান সুমু ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল উপস্থিত ছিলেন। এরপর মিরসরাই উপজেলা পরিষদ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়, মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা যুবলীগ ও উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম আলাউদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন, মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন, মায়ানী ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমদ নিজামী, মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আরিফ মঈন উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির হোসেন তপু, আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বাবুল, প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাইনুর ইসলাম রানা, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ভূঁইয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল নাহিদ প্রমুখ।

শোকাবহ এই দিনটিকে সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয়ভাবে উদযাপনের দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যারবৃন্দ অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হামিদ শরীফ, অধ্যাপক হাসিনা বেগম এবং নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান এক যুক্তবিবৃতিতে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতজন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা দেশে নজিরবিহীন। ট্রাক চালকের অদক্ষতা ও মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় সন্তান হারিয়ে পিতা-মাতার যে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, যে বুকভাঙ্গা কষ্ট সইতে হচ্ছে সেজন্য হলেও দিবসটি জাতীয়ভাবে উদযাপন করা উচিত। আমরা এই দিনটিকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ করারও পক্ষপাতি। কারণ মৃত্যু এবং সংখ্যার বিচারে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সংগঠনটির নেতারা বলেন, মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করলে তা যেমন নিহত শিক্ষার্থীদের শোকার্ত পরিবারের প্রতি উপযুক্ত সম্মান ও সমবেদনা জানানো হবে, তেমনি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হবে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।

 


সর্বশেষ সংবাদ