ছেলে সম্রাটের কামড়ে আহত নদীর মৃত্যু

সিংহী নদী
সিংহী নদী   © সংগৃহীত

কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে সিংহ বেষ্টনীতে এক কক্ষে নদী ও সম্রাট একসঙ্গে থাকত। তারা সম্পর্কে মা-ছেলে। তবে ঝগড়া-বিবাদেই তাদের সময় কাটত।

এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নদীর গলা-পেটে কামড়ে দেয় সম্রাট। এরপর থেকে অসুস্থ নদী একাকী পৃথক কক্ষেই থাকতো। তবে সাফারি পার্কের নদী নামের সেই সিংহটি শুক্রবার মারা গেছে। প্রায় টানা দুই মাস অসুস্থ থাকার পর মারা গেছে নদী। পরে এদিন বিকালে সিংহটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

সাফারি পার্ক সূত্র জানিয়েছে, এ বেষ্টনীতেই নদীর জন্ম হয়েছে, মৃত্যুর আগে নদীর বয়স হয়েছিল ১৫ বছর। এ বেষ্টনীতেই ২২ বছর বয়সী সিংহ সোহেলের সঙ্গে নদীর সংসার ছিল। তাদের প্রায় ১১ বছরের সংসার ছিল।

এ সংসারে টুম্পা (১০) ও সম্রাট (৯) নামে দুই সন্তান নদীর দুই সন্তান ছিল। তবে সিংহ সোহেলের নদীর সঙ্গে প্রথম সংসার নয়। এর আগে হীরা নামে আরেক সিংহীর সঙ্গে সোহেলের সংসার ছিল। হীরার পেটে জন্ম নেয় রাসেল (১৫)। রাসেলকে এ বেষ্টনীতে রেখেই হীরা মারা যায়।

আরও পড়ুন : ছাত্রলীগ নেত্রী থেকে সহকারী জজ মিতু

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, সকালে অসুস্থ নদী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে পার্কের অভ্যন্তরের মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

মো. মাজহারুল ইসলাম আরও জানান, এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে নদী, টুম্পা, সম্রাট ও রাসেলকে রেখে মৃত্যুবরণ করে রাসেল। আজ টুম্পা, রাসেল ও সম্রাটকে রেখে বিদায় নিলো নদী। এখন ৭৫ একরের সিংহ বেষ্টনীতে টুম্পা, রাসেল ও সম্রাট বেঁচে রয়েছে।

পার্কের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৪ সালে ৪ বছর বয়সী সোহেলকে এ পার্কে আনা হয়। সোহেলের সঙ্গে নদীর এই বেষ্টনীতে টানা ১১ বছর সময় কেটেছে। সোহেলের মৃত্যুর পর পশুগুলোর আক্রমণাত্মক আচরণ ও মনোভাব লক্ষ করা যায়। প্রায়ই একে অপরকে আক্রমণ-ঝগড়াঝাঁটি করতো। বার্ধক্যের কারণে সোহেলের মৃত্যু হয়ে ছিল। নদীর মৃত্যুর পর সম্রাট, রাসেল ও টুম্পার আচরণ কেমন হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন জানান, অসুস্থ সিংহীর উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিকবার মেডিকেল বোর্ড বসালে সিরাম ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে সিংহীর শরীরে ‘ভাইরাল ইনফেকশন’ পাওয়া যায়। পরে চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল মেডিকেল বোর্ড সিংহীকে অচেতন করেছিল। সিংহীর চেতনা ফিরে আসতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী জানান, সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় সিংহ ১৫ থেকে ১৮ বছর বাঁচে। মরে যাওয়া সোহেলের বয়স ছিল ২২ বছর। নদীর বয়সও ১৫ বছর অতিক্রান্ত।


সর্বশেষ সংবাদ