বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজ
এক পায়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সেই তামান্না
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩৬ AM , আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:১১ AM
দুই হাত নেই। পা-ও নেই একটি। বাকি একটি মাত্র পা-ই তার চলার সম্বল। আর সেই এক পায়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে হার না মানা তামান্না। এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় তামান্নার জিপিএ-৫। শুধু তামান্নার প্রত্যয় নয়, তার পরিবার ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।
তামান্না নূরার পরীক্ষার হলে টেবিলের ওপর বসে খাতায় লিখছে এক পায়ে। সে লেখা বেশ সুন্দর।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না। তাকে আগে থেকেই জানেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক। তিনি জানান, মেয়েটি মেধাবী। পরীক্ষার আগে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিশেষ কোটায় পরীক্ষা দিতে চায় কি না। তাহলে লেখার জন্য আধা ঘণ্টা সময় বেশি পেত।
সে প্রস্তাবে তামান্না রাজি হয়নি তামান্না। ইউএনও বলেন, ‘আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটি অদম্য তামান্নার মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের প্রত্যাশা পূরণে সহায় হোক। শুধু বাঁ পা নিয়ে জন্ম নেওয়া তামান্না প্রতিবন্ধিতার অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করুক।’
তামান্না নূরা ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পীর মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে বড়। বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।
কলেজের অধ্যক্ষ শামসুর রহমান বলেন, কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ভেতর তামান্না অদম্য মেধাবী। সে পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতিও নিয়েছে। তার প্রথম পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে। পূর্বের ন্যায় সে তার সাফল্য ধরে রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
বাবা রওশন আলী বলেন, পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এইচএসসিতেও সেই সাফল্য ধরে রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে। বড় হয়ে মেয়েটি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কী না, জানি না।
প্রথম দিন পরীক্ষা ছিল পদার্থবিজ্ঞানের। সে পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে তামান্না। সে বলেছে, পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ নম্বরের প্রত্যাশা করছি। বাকি পরীক্ষাগুলোর জন্যও প্রস্তুতি ভালো। আমি মেডিকেলে পড়তে চাই। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় যদি না পারি, তাহলে শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখব বিসিএস ক্যাডার হওয়ার।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম জিল্লুর রশিদ বলেন, তামান্না নূরার লেখা খুবই সুন্দর। চিত্রাঙ্কনেও তার জুড়ি নেই। অধ্যবসায় ও মনের জোরে অনেক কিছু যে করা সম্ভব, তামান্না তারই উদাহরণ।