রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ  © ফাইল ছবি

কবিতার রাজপুত্র, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কর্মী, তারুণ্য ও সংগ্রামের প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর পিতার কর্মস্থল বরিশালের আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন এই কবি।

‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের স্রষ্টা এই কবি মাত্র ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন।

কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রুদ্র স্মৃতি সংসদ, আজ কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠাখালিতে সকালে শোভাযাত্রা সহকারে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকালে মিঠেখালী ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।

এছাড়া সন্ধ্যায় মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে রুদ্র স্মৃতি সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলা শাখা এক স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। স্মরণসভা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করা হবে।

ডাঃ শেখ ওয়ালীউল্লাহ এবং মাতা শিরিয়া বেগমের ছেলে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মেঠ গ্রামে। কবির শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানাবাড়ি মংলা থানার মিঠেখালি গ্রামে। এখানেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার। ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসে ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল ভর্তি হন। সেখানে থেকেই ১৯৭৪ সালে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ এসএসসিতে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন কবি। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ময়দানে তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে প্রধান উদ্যোগীদের একজন ছিলেন রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ক্ষণজন্মা এই কবি তার তিন বছর পরে ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান।

অকালপ্রয়াত এই কবি নিজেকে আপামর নির্যাতিত মানুষের আবেগকে ছুঁতে পেরেছিলেন। তাইতো সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল তার কবিতা। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিল তার লড়াই। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ কিংবা ‘দিন আসবেই- দিন সমতার’- এসব কবিতা তার সেসব চিন্তার প্রমাণ বহন করে।

তার বিখ্যাত ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানের জন্য কবিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়া ‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার’ লাভ করেন তিনি। 


সর্বশেষ সংবাদ