এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন

আফগান ছাত্রীদের যেভাবে কাবুল থেকে বের করে আনা হয়

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ছাত্রীরা
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ছাত্রীরা  © সংগৃহীত

সময়টা ছিল তাদের জন্য দুঃস্বপ্নের মত, সাতটা বাসে তাদের কেটেছে ৪০ ঘণ্টা; দুই দফা মরিয়া চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬০ জন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত কাবুল ছাড়তে সক্ষম হন মার্কিন বাহিনীর সহযোগিতায়।

তালেবানের দখলে চলে যাওয়া কাবুল থেকে কীভাবে তাদের বের করে আনা সম্ভব হল, তার একটি বিবরণ টুইটারে শেয়ার করেছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি কামাল আহমেদ।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের আফগান শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আটকা পড়েছিলেন, কারণ তালেবান কাবুল দখল করে নেওয়ার পর তারা ফেরার ফ্লাইট পাচ্ছিলেন না।

তাদের বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল গত ২৫ অগাস্ট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা জারি করলে সেদিন তাদের কাবুল বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।

তারা ফিরে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর বিমানবন্দরের বাইরে আইএস এর আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনাও রয়েছেন।

দুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান তাদের নিরাপদেই কাবুল থেকে বের করে নিয়ে যায় এবং কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয় বলে শনিবার (২৯ আগস্ট) রাতে জানিয়েছিলেন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস।

কামাল আহমেদ লিখেছেন, তালেবান কেমন আচরণ করতে পারে, তা তারা যেমন জানেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও খুব ভালো করে তা বোঝেন।

“এমন পরিস্থিতিতেই আমরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিই। আর কেবল বর্তমান শিক্ষার্থীদের নয়, যারা আগে আমাদের এখানে পড়েছে, তাদের মধ্যে যারা আবার স্নাতক পর্যায়ের কোনো কোর্সে আসতে চায়, ভবিষ্যতে নিজের দেশে ফিরে সুন্দর জীবন গড়তে চায়, তাদেরও আমরা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম।”   

সেই চেষ্টা সফল হওয়ায় কতটা আনন্দিত, সে কথা শেয়ার করেছেন কামাল আহমেদ। কিন্তু চেষ্টা যে মোটেও সহজ ছিল না, সে কথাও লিখেছেন।

“অসাধারণ কিছু মানুষ প্রায় অলৌকিক এই কাজট করতে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাদের সেই অবদান আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করব।”

কামাল আহমেদ জানান, সাতটি বাসে করে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওই দলটিকে দুই বার কাবুল বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ফ্লাইট না ছাড়ায় তাদের ফিরে যেতে হয়। ৪০ ঘণ্টা সময় তাদের পার করতে হয় সেই বাসের ভেতর। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফার চেষ্টা সফল হয় ‘অসাধারণ কিছু মানুষের সহায়তায়’।

এক্ষেত্রে তিনি বিশেষ করে আফগান শিক্ষার্থীদের দলনেতা সেপেহরা আজমির নাম উল্লেখ করেছেন, আরও ছয়জন তাকে সহযোগিতা করেছেন সার্বিক সমন্বয় আর যোগাযোগের কাজে।  

“তারা সেই যোগ্যতা আর দৃঢ়তা দেখিয়েছে, যাকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বর্ণনা করে গেছেন ‘গ্রেস আন্ডার প্রেশার’ হিসেবে। এরকমটা আমি আগে দেখিনি,...।”

কামাল আহমেদ লিখেছেন, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তারা হাল ছেড়ে দেবে না।  

“অন্য এক আফগানিস্তানের ধারণাকে আমরা সমর্থন দিয়ে যাব, হয়ত সেই বাস্তবতায় এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কিন্তু আল্লাহ চাইলে একদিন তা সম্ভব হবে। সেপেহরা আর অন্য যাদের এইউডব্লিউ বিগত বছরগুলো ধরে শিক্ষা দিয়ে আসছে, সেই মেয়েরাই একদিন সেই আফগানিস্তানকে বাস্তবে পরিণত করবে। সেই দিন একদিন আসবেই।”  


সর্বশেষ সংবাদ