বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েল ভ্রমণে শাস্তি, অন্য দেশ থেকে গেলে কী?

বাংলাদেশের পাসপোর্ট
বাংলাদেশের পাসপোর্ট  © ফাইল ফটো

সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরায়েল শব্দদুটি বাদ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বলে ইসরায়েল অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে দেশ হিসেবে স্বীকার করে না বাংলাদেশ। তাই সেখানে কোনো বাংলাদেশি গেলে তাঁর শাস্তি পেতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনোরকম সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি, বরং বাংলাদেশ থেকে কেউ ইসরায়েলে যেতে চাইলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইনের শিক্ষক ড. মো. পারভেজ সাত্তার সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, ‘এখানে প্রধানত দুটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। এক হলো ইসরায়েল-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ভ্রমণ শর্তসমূহ। ১৯৭১ সাল থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। একারণে বাংলাদেশে ইসরায়েলি দূতাবাস বা এমন কোনো অফিস নেই। একইভাবে ইসরায়েলেও বাংলাদেশের দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট অফিস নেই। কূটনৈতিক সম্পর্কহীনতা মানে বাণিজ্য হোক, দুইপক্ষের চুক্তি বা এমন কোনো ব্যাপার নেই।’

ড. মো. পারভেজ সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইনের ৩ নম্বর ধারা মতে, প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো নীতি গ্রহণের এখতিয়ার বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে। এর মানে এই আইনের বলে, বাংলাদেশের পাসপোর্টে উল্লেখ করা হতো, এই পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ব্যতীত পৃথিবীর যেকোনো দেশে ভ্রমণ করা যাবে। আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তাইওয়ানের নামও ছিল সেখানে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তাইওয়ানের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এবার বাদ দেওয়া হলো ইসরায়েলের নাম।

এখন প্রশ্ন হলো, আপনি এটাকে আইন বলবেন কি না। হ্যাঁ, এটা আইনেরই অংশ (যেহেতু আইনের উল্লিখিত ধারায় রয়েছে)। তবে এখন পর্যন্ত এই আইনের পারিপার্শ্বিকতা পরিস্কার নয়। কেউ বলছেন, বাংলাদেশিরা ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারবেন। আবার অন্যরা বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশ আর ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ভ্রমণ সম্ভব নয়। সরকার বলছে, পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে। অতএব বাংলাদেশিরা ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারবেন না। এই দাবি অনুযায়ী, শব্দুদুটি পাসপোর্টে নেই, কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।’

আরও পড়ুন: আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে ইসরায়েলি জবরদখলের নিন্দা প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করা এই শিক্ষক বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি এই দেশ থেকে ইসরায়েলে যায়, আমার মতে, বাংলাদেশে এটি অবৈধ হবে। কিন্তু কেউ যদি অন্য দেশ হয়ে তারপর ইসরায়েলে যায় সেক্ষেত্রে তার পাসপোর্ট দেখে ইসরায়েল তাকে আটকানোর কোনো কারণ পাবে না।’

এদিকে দুদিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশ ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেনি। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক গড়ারও কোনো রকম চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি। বাংলাদেশের ইসরায়েল নীতি অপরিবর্তিত থাকবে।

এর আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বলে জানানো হয়। তার আগে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর গিলাড কোহেনও তার ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্টে দাবি করেন, বাংলাদেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ভারতের সায়েন্টিস্ট অব দ্য ইয়ার’ হয়েছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী কাওছার

সর্বশেষ বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা তাদের পাশে থেকেছি। আমরা ইসরায়েলকে দেশ হিসেবে স্বীকার করি না। যত দিন আমরা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিচ্ছি, তত দিন কোনো বাংলাদেশি সেখানে যেতে পারবেন না। কোনো বাংলাদেশি সেখানে গেলে শাস্তি পেতে হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম পাসপোর্ট সংশোধন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবে ইসরায়েল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট। ফিলিস্তিন নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, মাস ছয়েক আগে বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গটি বাদ দেয়। সরকার বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। এ পরিবর্তন করা হয়েছে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মানের স্বার্থে।


সর্বশেষ সংবাদ