প্রতিবেশীর আচরণে বিস্ময় করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক, বললেন কষ্ট পেয়েছি ভীষণ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৫:৫৮ PM , আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৬:৪১ PM
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি তার প্রতিবেশীর আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এরপর প্রশাসনসহ সচেতন মহল তাকে সাহায্যে এগিয়ে যায়।
জানা যায়, উপজলার রামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. কাউছার জাহান মনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ অবস্থায় তার বাড়িতে খাবার পানি দেয়ার কাজে নিয়োজিত গৃহপরিচারিকাও এখন আর তার ঘরে পানি দিতে যান না। তীব্র পানীয় জলের সংকটে পড়েন ওই চিকিৎসক পরিবার। কারণ প্রতিবেশীরা চিকিৎসক মনির বাড়িতে খাবার পানি সরবরাহকারী নারীকে পানি সরবরাহ করতে নিষেধ করেছেন। প্রতিবেশীদের ধারণা, তারাও এতে করোনায় আক্রান্ত হবেন।
অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে ওই চিকিৎসক শুক্রবার (৩ জুলাই) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। নিচে সেই স্ট্যাটাসটি তুলো ধরা হলো-
“এক কলসি পানির দাম কত.....!!! এই মুহুর্তে মেলা দামি জিনিস এই এক কলসি বিশুদ্ধ খাবার পানি। পানি শেষ গেলে টেনশানে মাথা খারাপ হয়ে যায়। পানি এনে দেবে কে? আমার কাজের সাহায্যকারিনী প্রতিদিন পাশের বাড়ি থেকে পানি এনে দিতো। এখন তাকে ফোন দিতে দিতে ক্লান্ত, আমার ফোন আর ধরে না।
বহুবার ফোন দেয়ার পর সে ফোন ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, আপা সন্ধ্যায় লুকায়া পানি এনে বাসার নিচে রেখে যাবো। আমাদের পানি এনে দেয় বলে তাকে নাকি বাড়ির লোক আর পাড়া প্রতিবেশী হেনস্তা করছে। মারধরেরও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে.... ওফ... কী ভয়ানক অবস্থা। প্রিয় ভাইবোন, পাড়া-প্রতিবেশী, আমি কোভিড-১৯ কে ভালোবেসে নিমন্ত্রণ জানিয়ে শরীরে নিয়ে আসিনি।
আপনাদেরই কেউ অসুস্থ অবস্থায় সেবা নিতে এসে আমাকে মারণব্যাধী দিয়ে গেছেন। অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরও, পিপিই খুলে ফেলার পরও আবদার করে আপনারা পাড়া-প্রতিবেশীরাই আসেন সেবা নিতে। হাজারবার বলার পরও মাস্ক না পরে কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনারাই রোগে শোকে আসেন। কেউ বলতে পারবেন, কোনদিন কাউকে ফিরিয়ে দিয়েছি?
শোনেন, এই দুনিয়ায় সবকিছু ফেরত আসে। আল্লাহর দয়ায় যদি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসি আমি কিন্তু আবারও আপনাদের সেবা দেবো, সেটা সময়ে অসময়ে যখনই হোকনা কেন। পরিশেষে এভাবে বলার জন্য কেউ যদি কষ্ট পান, মাফ করে দিয়েন। কোনও অভিযোগও নেই, শুধু এইটুকু বলি কষ্ট পেয়েছি ভীষণ।”
স্ট্যাটাসটি নজরে আসলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুপ্রভাত চাকমা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সেলিম, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান, ওসি তদন্ত রবিউল হক ছুটে যান ডা. কাউছার জাহান মনির বাড়িতে। তারা তার স্বাস্থ্যসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।