বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের রুল, তবুও নিয়োগ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ

হাবিবুর রহমান
হাবিবুর রহমান  © সংগৃহীত

দুর্নীতির ৪ মামলার আসামি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ও কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আশরাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ওই রুলের পরও কর্তৃপক্ষ তার বিরুেদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।  উল্টো তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে বেবিচকের কর্মকর্তাদের মধ্যে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, ৩ মার্চ (সোমবার) বেবিচকের বোর্ড সভায় হাবিবুর রহমানকে নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া। আগামী ২৩ মার্চ বেবিচকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আরও পড়ুন: ২৫০ টাকার দ্বন্দ্বে স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত, প্রাণ হারালেন দিলদারুল

বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ও বরখাস্ত করতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের ৬ জন আইনজীবীর পক্ষে রিটটি করেন। রিটে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচকের চেয়ারম্যান, পরিচালক (প্রশাসন) ও প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানকে বিবাদী করা হয়।

এর আগে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিট করা হয়। রিটকারীরা হলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার), ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট মো. শাহেদ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার। নোটিশে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে তৎক্ষণাৎ তার পদ থেকে সরাতে বলা হয়েছিল। নোটিশে একদিনের মধ্যে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীকে তার পদ থেকে সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনি, নিহত ২

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিমানবন্দরগুলোয় শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের অনুসন্ধানে এই লুটপাটের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়নের নামে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নোটিশে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলীর মতো পদে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে। তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করতে পারেন বা সরিয়ে ফেলতে পারেন। তাই তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা জরুরি। তিনি পদে থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক। হাবিবুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর পদে থাকলে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত হতে পারে এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও একাধিক অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি করেছেন এক ভুক্তভোগী। তারপরও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: গণপিটুনিতে ২ জন নিহত, গুলিবিদ্ধ ৫

উল্লেখ্য, বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় ইতোমধ্যে আসামি হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনালসহ দেশের ৮ বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) বলেন, ‘বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে  বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।  বিবাদী পক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ