‘সুকৌশলে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা চলছে’

তারেক রহমান
তারেক রহমান  © সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরই মধ্যে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্তপিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক শ্রমিক জনতা আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। যারা বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তাদের ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে একধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিএনপির বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচার বিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলনে, যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সন্তান-স্বজন হারিয়ে যেসব পরিবার নিদারুন দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ আপামর জনগণের কাছে দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, আজকের বর্ধিত সভার শুরুতে আমি তাদের প্রত্যেকের অবদানকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই।

এ সময় তিনি ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টে তাঁবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে দলমত-নির্বিশেষে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের সাহসী বীর আবু সাইদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, রিয়া গোপ, আব্দুল আহাদ এবং বিএনপির পাঁচ শতাধিকসহ হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সংস্কারের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশকে চিরতরে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে গত দেড় দশকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছিল।

অর্থপাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল দেশের সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।
 
তিনি বলেন, রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি। সেটি হলো, ‘একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো, ‘রাষ্ট্র ও সমাজে  জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনোটিই টেকসই হবে না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না। 

জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। জনগণও বিএনপিকে বিশ্বাস করে। সুতরাং আপনার প্রতি আপনাদের প্রতি বিএনপির প্রতি জনগণের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জনগণের সঙ্গে থাকুন জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সাত বছর পর ডাকা বিএনপির বর্ধিত সভা বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সভা শুরু হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সভায় সারা দেশ থেকে সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এই বর্ধিত সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্যরা অংশ নেন। দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরাও অংশ নেন। সভায় মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রয়ারি রাজধানীর ‘লা মেরিডিয়ানে’ বিএনপির বর্ধিত কমিটির সভা হয়। যেখানে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এর চার দিন পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায় আওয়ামী লীগ সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ