মিথ্যা অভিযোগের মনগড়া তদন্তে চাকরিচ্যুত শিক্ষক, বিভাগীয় তদন্তের দাবি
- গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১১ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১১ PM
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. উজ্জল মিয়াকে মিথ্যা অভিযোগের মনগড়া তদন্তের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। ন্যায়বিচারের দাবিতে মো. উজ্জল মিয়া আদালতে মামলা করেছেন এবং বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। চাকরি হারিয়ে তিনি বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা সোনালী আক্তারের সঙ্গে আপত্তিকর ও অশালীন আচরণের অভিযোগে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী শিক্ষক মো. উজ্জল মিয়ার কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চায় অত্র স্কুলের তৎকালীন অধ্যক্ষ ডা. জান্নাতুল নাঈম। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২৮ জুলাই উজ্জল মিয়াকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পরদিন ২৯ জুলাই বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের তৎকালীন অধ্যক্ষের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান মো. উজ্জল মিয়া।
লিখিত ব্যাখ্যায় মো. উজ্জল মিয়া বলেন, ‘স্কুলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কারও সঙ্গে মন্দ আচরণ করি নাই। কী কারণে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তা জানা নেই। সততার সঙ্গে শিক্ষকতা করেছি। বিদ্যালয়ের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে প্রিন্সিপাল ও সিনিয়র ম্যাডামদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়। এরপরই স্কুল থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়।’
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
এ ছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, শোকজের জবাব মাত্র ৩ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয় এবং অস্থায়ী বরখাস্তকালীন সময় বেতনের অর্ধেক পাওয়ার বিধিমালা থাকলেও তাকে এক-তৃতীয়াংশ বেতন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৮ জনের বক্তব্য তদন্ত কমিটি নিলেও রিপোর্টে ৬ জনের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়। তদন্ত সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন তিনি। সুষ্ঠু তদন্ত না করে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে দাবি করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. উজ্জল মিয়া সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, তদন্ত রিপোর্টে ৬ষ্ঠ সাক্ষী ডেলফি বেগম। তিনি অত্র স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। তদন্ত কমিটিকে তিনি মৌখিক বক্তব্য দিলেও লিখিত কোনো বক্তব্য দেয়নি। তদন্ত কমিটির কাছে যেসব তথ্য তিনি প্রদান করেছেন, তার সম্পূর্ণ বিপরীত কথা তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ডেলফি বেগম বলেন, ‘উজ্জল স্যারকে কোনো বেয়াদবি করতে দেখিনি।’
সহকারী শিক্ষিকা সোনালী আক্তার বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী। যথেষ্ট প্রমাণ আছে আমার কাছে। এ বিষয় স্কুল কর্তৃপক্ষ, সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকরা সবাই জানে। এখন আদালত যা বলবে।’
আরও পড়ুন: রাবিপ্রবিতে ভিসি নিয়োগে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
এ বিষয় বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের উপাধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক মো. উজ্জল মিয়াকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি দোষী ছিলেন না। তদন্ত কমিটির কাছে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য দিলেও তদন্ত রিপোর্টে আমার নামও রাখা হয়নি।’
বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের বর্তমান অধ্যক্ষ নাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করায় বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু জানি না।’
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, মামলাটি আদালতে চলমান। আদালতের রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।