আচরণবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৬ AM , আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৩ AM
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করায় বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এখন পর্যন্ত আট কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের সদস্যরা রয়েছেন।
এ ছাড়া আরও দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষা ক্যাডারের; বাকি তিনজনের মধ্যে একজন বিসিএস প্রশাসন, একজন প্রাণিসম্পদ এবং একজন মৎস্য ক্যাডারের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে।
তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে আরও অনেকে অভিযুক্ত। তাদের বক্তব্য, মোট ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে ৪ অক্টোবর আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে সভাপতি করে গঠন করা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ১৭ ডিসেম্বর একটি সাংবাদিক মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। সেখানে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ কোটা দেওয়া হবে। বর্তমান কোটা ছিল যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ। এই প্রস্তাবের পর থেকেই প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়। এরই মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ সভা, জমায়েত এবং কর্মবিরতির মতো বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার প্রতি কোনো কর্মকর্তা যদি শ্রদ্ধা না দেখান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে যারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এখন জনগণের সেবায় মনোযোগী হওয়া উচিত। তা না হলে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করার জন্য কর্মবিরতি দেওয়া উচিত নয়।
এদিকে ১ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার মধ্যে পড়েছেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ক্যাডার বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। একই দিনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাদিকুর রহমান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এবং তাকে গত ২৯ ডিসেম্বর ওই পদ থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়।
এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে চারজন সরকারি কলেজের প্রভাষক এবং একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন।
শাহাদাৎ হোসেন (প্রাণিসম্পদ) এবং এমদাদুল হক (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরূপ মন্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গম্ভীর, কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, অথচ অন্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’ তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যতটা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমান জানান, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি মেনে চলতে হয়। যারা নিয়ম ভেঙে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।