সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে কী আছে, কেন আলোচিত? 

বিভিন্ন কারণেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আলোচিত ও সমালোচিত
বিভিন্ন কারণেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আলোচিত ও সমালোচিত  © প্রতীকী ছবি

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে এনেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

বিভিন্ন কারণেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আলোচিত ও সমালোচিত। বাংলাদেশের সংবিধানে এই পর্যন্ত পরিবর্তন এসেছে মোট ১৭ বার। তার মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধন সবচেয়ে আলোচিত একটি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাদ দেওয়ার এই সংশোধনের মধ্যে বর্তমান সংকটের বীজ নিহিত বলেও অনেকে মনে করেন। আওয়ামী লীগ সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধন আনার পর যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো হয়েছে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে। আর এর সবগুলোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

কী আছে পঞ্চদশ সংশোধনীতে

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলই হয়নি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয়ও ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসাবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। 

পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অনেকে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢুকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন করা হয়েছে তার (শেখ মুজিব) বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে।  

জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন এখন ৫০টি। এসব আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বহাল রেখে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী আনা হয় ২০১৮ সালে।

সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির বিষয়ে সংশোধিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (ক)-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রয়োগে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ রদ, বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা করার উদ্যোগ নিলে বা ষড়যন্ত্র করলে তা রাষ্ট্রদোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।


সর্বশেষ সংবাদ