শোভাযাত্রায় শিক্ষকসহ বিএনপির ৬ নেতাকর্মীর উপর যুবলীগের হামলা
- যশোর জেলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ PM , আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ PM
যশোরের মনিরামপুরে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যাওয়ার পথে স্কুল শিক্ষক ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করেছে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় ৭ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনী। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার টেংরামারী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা হলেন, আব্বাস উদ্দিন (৩৫), রাকিব হোসেন (২২), নজরুল ইসলাম ভুট্টো (৪৫), মাসুদ (২৫), মাসুদ হোসেন (৩৫) ও মনিরুজ্জামান (১৫)। এদের মধ্যে আব্বাস, রাকিব, ভুট্টো ও মাসুদ হোসেনকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা টেংরামারী বাজারে আসেন। এসময় টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হট্টোগোল দেখে তারা এগিয়ে যান। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমকে মারধরের ঘটনা ভিডিও ধারণ করতে থাকে। তখন স্থানীয় যুবলীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী রড, লাঠিসোঁটা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ করে। এতে স্কুল শিক্ষকসহ বিএনপির ৬ জন আহত হন।
আহত আব্বাস উদ্দিন বলেন, বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য তারা টেংরামারী বাজারে এসেছিলেন। শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ভিডিও ধারণ করতে গেলে যুবলীগের নেতা নাজিম, সিরাজুলসহ ২০ থেকে ২৫ জন আমাদের উপর রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। আমাদের ৬ জন হয়েছেন।
টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রধান প্রভাস চন্দ্র ছুটিতে ছিলেন। সরকারি ও বোর্ডের পরিপত্র নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছু বিস্তারিত উল্লেখ করে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে এসে যোগদানপত্র দাখিল করে খাতায় স্বাক্ষর করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি পক্ষ বিদ্যালয়কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে তারাই বিদ্যালয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র কেন খাতায় স্বাক্ষর করেছেন তা নিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। পরে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমসহ ৮-১০ জন মাথায় আঘাত করে। পরে সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি। তাৎক্ষণিক বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য হোসেন আলী বলেন, তাদের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তবে টেংরামারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র বিগত দিনে বহু অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যে কারণে পট পরিবর্তনের পর থেকে একদিনও প্রতিষ্ঠানে আসেননি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইউএনও অফিসে ছয়টি অভিযোগসহ আদালতে মামলা চলছে, যা প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী এরই মধ্যে প্রভাস চন্দ্রের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। প্রধান শিক্ষকের পক্ষে তার কর্মকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম। ঘটনার দিন একটি পক্ষ তাদের পক্ষের নজরুল ইসলাম ভুট্টো, মাসুদ আলম ও মাসুদ হোসেন নামে তিন কর্মীকে মারধর করে।
খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য শামছুজ্জামান শান্ত বলেন, সোমবার সকালে মনিরামপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে একটি বিজয় শোভাযাত্রা করা হয়। এতে অংশগ্রহণের জন্য খেদাপাড়া ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা টেংরামারী বাজারে আসছিলেন। একজন স্কুল শিক্ষককে মারপিটের ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ এনে আব্বাস, রাকিব ও মনিরুজ্জামানকে মারধর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হামলার শিকার রাকিব হোসেন খেদাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ও আব্বাস উদ্দিন খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ প্রার্থী। হামলাকারীদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলাম যুবলীগের সদস্য বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষককে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে। যেটা কখনই কাম্য নয়। এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষককে মারপিটের ঘটনাটি শুনেছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই তদন্তপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মনিরামপুর থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, হট্টোগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।