প্রশিক্ষণে ‘দৌড় না দেওয়া’র অভিযোগে ২৫ এএসপিকে শোকজ, বাদ পড়ার শঙ্কা

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি  © ফাইল ফটো

এবার রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ২৫ এএসপিকে শোকজ করা হয়েছে। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) একাডেমির প্রিন্সিপালের পক্ষে পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়।

জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের (পুলিশ) ২৫ এএসপিকে ‌‘প্যারেডে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটা’র অভিযোগে শোকজ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে চিঠি দিয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদের। এরপর থেকে উদ্বেগে রয়েছেন ৪০তম বিসিএসের ওই পুলিশ ক্যাডাররা।

শোকজ নোটিশের চিঠিতে বলা হয়, প্রশিক্ষণ চলাকালে ২৬ নভেম্বর বিকেলে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হেঁটে চলা শুরু করেন। তাদের কারণে অন্যরা সঠিকভাবে দৌড়াতে পারছিলেন না। দৌড়ানোর কথা বলা হলেও ২৫ জন তাতে কর্ণপাত না করে কটূক্তিমূলক কথা বলেন। এতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এছাড়া তারা অন্যদের শৃঙ্খলাভঙ্গে উৎসাহিত করে।

চিঠির ভাষ্য, একজন প্রশিক্ষণরত এএসপি (প্রবেশনার) হিসেবে এরূপ কার্যকলাপ ও আচরণ কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য, কর্তব্যে অবহেলা এবং শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এটি অসদাচরণের শামিল উল্লেখ করে প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। 

এ ধরনের কার্যকলাপ ও আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কেন পাঠানো হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

বিষয়টির সত্যতা জানতে সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয় অভ্যন্তরীণ। সে কারণে এখনই কিছু বলা যাবে না।’

পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আনা হলেও বাস্তবে এর কিছুই হয়নি দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশিক্ষণরত অন্তত তিন পুলিশ ক্যাডার। তাদের বক্তব্য, মোট ৪২০ দিন ধরে তারা ট্রেনিং করছেন। দীর্ঘ এ সময়ে এ ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা ঘটনা তো দূরের কথা, তারা চিন্তাও করতে পারেননি। একজন বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর প্রশিক্ষণরত পুলিশদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যারা খুশি হয়েছিলেন, এমন কয়েকজনকেও এই শোকজ দেওয়া হয়েছে। আবার রাজনীতির ‘র’ বুঝেন না, এমন কয়েকজনও নোটিশ পেয়েছেন। ঠিক কী কারণে এবং কেন এই শোকজ— এখনও তারা বুঝতে পারছেন না।

অন্য একজন পুলিশ বলেন, ৪০ তম বিসিএসে যোগ দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারসহ অনেক ক্যাডার দুই বছর পার করে ফেলেছেন। তাদেরও চাকরিও স্থায়ী হচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতায় আনতে যারা এর আগে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, ৪০ তম বিসিএসের অ্যাডমিন ক্যাডাররা তাদের অন্যতম; কিন্তু তাদের কিছুই হয়নি। অথচ তাদের ব্যাচের ক্যাডার হয়েও এখনও আমরা ট্রেনিংরত। যোগদানই হয়নি, বেতন-ভাতা দূরের কথা। শুধু তাদের সঙ্গে কেন এই বৈষম্য— চুপসে যান এই ক্যাডার।

এর আগে গত-৩ নভেম্বর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৫৮ উপ-পরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেয়া হয়। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাদের অব্যাহতিপত্র দেয়া হয়েছিল। এর আগে গত ২২ অক্টোবর ২৫২ জন ও ২৫ অক্টোবর ৫৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতির আগে তাদেরও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ