নোয়াখালী জেলা আ.লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর

নোয়াখালী জেলা আ.লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর
নোয়াখালী জেলা আ.লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর  © টিডিসি ফটো

নোয়াখালীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নোবিপ্রবিসহ, নোয়াখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে 
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন হয়েছে। সমাবেশের এক মুহুর্তে আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে ভাংচুর করেছে দুষ্কৃতিকারীরা। তবে এর  সাথে আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী সমন্বয়কদের। 

শনিবার (৩ আগষ্ট)  বিকাল ৫টায় পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সময়ে নোয়াখালীর বড় মসজিদ মোড়ে আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে এ ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর ২টা ৩০ এর দিকে নোয়াখালীর মাইজদী বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময়ে শিক্ষক, অভিভাবকসহ, ছোট-বড় নানান পেশার স্থানীয় লোকজন আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মাইজদী বাজার থেকে শুরু হয়ে নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। এসময়ে একদল মুখোশধারী কিশোর আওয়ামী লীগের জেলা অফিসে প্রবেশ করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।

অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরের বিষয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহীদুল্লাহ খান সোহেল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবিরের দুষ্কৃতকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ দিয়েছে। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

এসময়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, মাইজদী বাজার থেকে শুরু হয়ে আমাদের কর্মসূচী নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে সমাবেশ চলছিল। কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন ধরনের গুজব শুনতে পাই। হটাৎ করে শুনলাম আমাদের একজন শিক্ষার্থীকে আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে আটকায় রাখছে এবং  আন্দোলন এমন সময়ে  একটি গ্রুপ সমাবেশের উত্তরদিকে থেকে এসে হামলা চালাবে। এতে করে আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। এমন সময়ে, আওয়ামী লীগের জেলা অফিসে আগুন জ্বলতে দেখি আমরা।

ঘটনার অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন লোক জানান, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বৃষ্টির মধ্যে চলছিল। হঠাৎ করে ছাত্রলীগের একাংশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মুখোশধারী একদল কিশোর আওয়ামী লীগের জেলা অফিসে প্রবেশ করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এসময়ে আমরা সবাই যে যার মতো ছুটাছুটি করা শুরু করি।

প্রত্যক্ষদর্শী আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক বলেন, আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে ভাংচুর হচ্ছে শুনের আমরা কয়েকজন সেদিকে যাই। গিয়ে দেখতে পাই কয়েকটা ছেলে মাস্ক পরা হাতুড়ি দিয়ে পার্টি অফিসের গেট এবং তালা ভাঙ্গতেছে। তাদের অন্যদের হাতে মোটা রড, কাঠ, লোহাকাটার ব্লেড দেখতে পাই। একজনকে দেখি হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গতেছে। আমি আঘাত পাই তারপরেও আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে সরে যেতে বলে। আমি সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে জোরাজোরি করে একজন থেকে হাতুড়ি নিয়ে গেলে আমার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে। আমার সাথে বাকি যারা ছিলো তারা বলতেছে ভাই আপনাকে মারবে আপনি চলে আসেন। তারপরেও চেষ্টা করেছি আমি। তাদের এমন আচরণ দেখে আমাকে আমার সমন্বয়করা টান দিয়ে বের করে নিয়ে আসে। 

পরবর্তীতে দেখি অফিস থেকে ঢিল এবং কাঠ ছুড়তেছে এবং এতে আমাদের ৩/৪ জন আহত হয়। এর একটু পরে দেখতে পাই পার্টি অফিস থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে আমি নিশ্চিত যে এরা আমাদের আন্দোলনকে নষ্ট করা জন্য এমনটা করেছে। আমাদের আন্দোলনকারীদের এর সাথে সম্পৃক্ততা নেই। 

তবে এ বিষয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক বনী ইয়ামিন বলেন, একেবারে প্রথম থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলাম। কিন্তু আজকে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে এমনটা আশা করিনি। কারণ আমরা শুরু থেকেই নির্দেশনা দিয়ে আসছিলাম আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করব এবং তাতে আমরা সফল ও হই। আমরা কিন্তু আজকে কিছু দুষ্কৃতিকারী আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য এমনটা করেছে। আমরা শুনতে পাই আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে ভাংচুর হচ্ছে এবং আমাদের একজনকে পার্টি অফিসে আটকায় রাখছে।  তাৎক্ষণিক আমাদের একটা শৃঙ্খলা বাহিনীকে পাঠাই বিষয়টা দেখার জন্য। তারা জানায় যে  আামাদের আন্দোলনকারীদের কেউ এখানে সম্পৃক্ত না। তারপর তারা চেষ্টা করছে যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির না করতে পারে। যার ফলে আমাদের ৪/৫ জন সমন্বয়ক হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর  হয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই আমাদের আন্দোলনকারীদের কেউ এখানে সম্পৃক্ত ছিল না। 


সর্বশেষ সংবাদ