কোটা ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানালেন মুক্তিযোদ্ধা সোহেল রানা

সোহেল রানা
সোহেল রানা  © ফাইল ফটো

সরকারি চাকুরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ধরনের সরকারি চাকরিতে এ প্রথাকে ‘বৈষম্যমূলক’ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবস্থান এবং অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

চলমান এ আন্দোলনরত নিয়ে নিয়ে বিভিন্নজনের অবস্থানিক মতামত লক্ষণীয় হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। তারই অংশ হিসেবে এবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক এবং মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের এ অবস্থান জানান তিনি।

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ চিত্রনায়ক তার পোস্টে জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বারবার বলা হচ্ছে কেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর। তার সঙ্গে যদি আরও ১২ বছর যোগ করা হয় তাহলে তার বয়স হয় ৬৫। এই বয়সে তো নিশ্চয়ই কেউ চাকরির জন্য চেষ্টা করে না, বা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় না। তাদের সন্তানদের বাবার জন্য কোটা সিস্টেমে চাকরি এবং ভর্তি হতে হবে এটা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার শামিল। নিজ ম্যারিটের গুণে তারা ভর্তি হবে, পরীক্ষা দেবে এবং চাকরিতেও ইন্টারভিউ দেবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনও এ ধরনের সুযোগ চাইনি। সম্মান যখন নেই তখন এই ধরনের সুযোগ দিয়ে তার সন্তানদেরকেও সম্মান দেখানো একটা অপচেষ্টা মাত্র।’

আরও পড়ুন: ফার্মগেট-মৎসভবনসহ আরও ৭ মোড় অবরোধ আন্দোলনকারীদের

নিজের অবস্থান জানিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘সম্মানী দেওয়া ছাড়া তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) জন্য আপনারা কি করেছেন মুখে, মুখে? তাদের জন্য মায়া কান্না করেছেন ড্রেস থেকে শুরু করে চিকিৎসা বা চলাফেরা কোনো কিছুতেই কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই আমরা কখনোই কিছু চাইনি। জাতির পিতার নির্দেশে দেশ স্বাধীন করার দরকার ছিল আমরা সেটাই করেছি। সর্বস্তরে এই কোটা সিস্টেম বাতিল করা হোক এটা দেশের সবার দাবি।’

‘চাষাবাদ করলেও একটি সিআইপি কার্ড পাওয়া যায়। দেশের জন্য যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধাদেরও একটি কার্ড দেওয়া হয়, কিন্তু তা কোনো জায়গায় ব্যবহার করার জন্য কাজে আসে না, ভিআইপি বা সিআইপি তো নয়ই। আমরাই নাকি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। আহারে জীবন।’ পরবর্তীতে আরেকটি পোস্টে জানান সোহেল রানা।

প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

আরও পড়ুন: এবার রেললাইন অবরোধ চবির কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ