নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির পর নির্মাণ হচ্ছে সেতু

নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির পর নির্মাণ হচ্ছে সেতু
নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির পর নির্মাণ হচ্ছে সেতু  © সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীর যে ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছিল সেখানে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াই আকৃতির সেতু। আউলিয়ার ঘাটে এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

করতোয়া নদী বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট বড়শশী ও কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এ দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলা শহরে যেতে নৌকাই একমাত্র ভরসা। সেতুটি নির্মিত হলে বোদা ও দেবীগঞ্জের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। সেতুর অভাবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী পরিবহণে প্রায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বোদা উপজেলার আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নৌকাডুবির এ ঘটনার পর মাড়েয়া ঘাটে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন (এমপি) সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রতিশ্রুতির দুই বছরের মাথায় মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর ১৮ অক্টোবর ওয়াই আকৃতির একটি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এর মধ্য দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর থেকে নদীর ওপর দৃশ্যমান হয় সেতুটি। এখন পর্যন্ত সেতুর ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা। সেতুটির শুরুর অংশ মাড়েয়ার দিকে থাকবে এবং অপর দুই অংশের একটি বড়শশী ও অপরটি কালিয়াগঞ্জের দিকে থাকবে।

স্থানীয়রা জানায়, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ কমবে স্থানীয়দের। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুই ইউনিয়নের মানুষ একই সঙ্গে চলাচল করতে পারবে। সেতু নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহজীকরণের সুফল ভোগ করবেন। 

নৌকা ডুবিতে দুই স্বজন হারানো চন্দ্র্রমোহন বর্মন বলেন, সেদিন মহালয়ায় যাওয়ার সময় নৌকা ডুবিতে আমার ভাতিজা ও তার স্ত্রী মারা যান। তা আজও ভুলতে পারিনি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাড়েয়া ঘাটে করতোয়া নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এসেছি। অবশেষে নৌকা ডুবির ঘটনার পর সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। এখানে আগে সেতুটি নির্মাণ হলে সেই দুর্ঘটনা ঘটত না। 

সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এনডিই লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. ওয়াসিম জানান, সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ইতিমধ্যে আমাদের ৩০ শতাংশের বেশি কাজ এগিয়েছে। এখন তো বর্ষাকাল। নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরেও আমাদের কাজ থেমে নেই।

পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান সাংবাদিকদের বলেন, সেতুটি দ্রুত নির্মাণে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘ওয়াই’ আকৃতির সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর মাঝ পথ থেকে দুই অংশে বিভক্ত হয়েছে। এক অংশ ৫৪৫ মিটার, আরেক অংশ হবে ৩৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য। আশা করছি আগামী দুবছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

এদিকে সম্প্রতি কাজের অগ্রগতি দেখতে ঘাট পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দুই বছর আগে এ ঘাটে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ সেতু হওয়ার পর এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা অনেকটাই পরিবর্তন হবে। নতুন করে গড়ে উঠবে পর্যটন শিল্প।


সর্বশেষ সংবাদ