ঈদের দিনও ভালো নেই সুনামগঞ্জবাসি

ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আবারও সিলেট- সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ঈদের দিন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় পাহাড়ি ঢলে নদীগুলো টইটুম্বুর হয়ে ফুলে উঠেছে হাওর। রাতের মুষলধারে বৃষ্টির ভয়ে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় কুরবানির পশু কাটতেও ঝামেলায় পড়েছে।

এদিকে সিলেটের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী পাঁচ দিন সিলেট-সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে এতে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, সুনামগঞ্জ সদর সহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে। প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল।

টানা কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সুরমা, চেলা, খাসিয়ামারা ও চিলাই নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সদরের সাথে ছয়টি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দোয়ারাবাজার-বোগলাবাজার শরীপপুর গ্রামের পাশের সড়ক ও দোয়ারাবাজার -বাংলাবাজার ব্রিটিশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সুরমা, লক্ষিপুর, বোগলাবাজার, বাংলাবাজার, নরসিংপুর, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের। ইউনিয়নগুলোর প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি রয়েছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে প্রবেশ করছে পাহাড়ি ঢলের পানি।

তাহিরপুর ও দিরাই উপজেলার কয়েকশো গ্রাম উজানের পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। গতকাল রাত থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে নোয়াগাঁও বেড়িবাঁধ, ইদ্রিছপুর বেড়িবাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের বিজিবি ক্যাম্পের পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ২০টি গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠে। বোগলাবাজার ইউনিয়নের কইয়াজুড়ি, পেকপাড়া, বাগাহানা, বোগলা, লক্ষিপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, দৌলতপুর, ইদ্রিছপুরের বাঁধ ভাঙায় বক্তারপুর, খাগুরা, মহব্বতপুর, বহরগাঁও গ্রামে পানি ঢুকে শতাধিক বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোথায় কোন বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ১৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত সহ আগাম সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের সুরমা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, একদিকে রাত পোহালেই ঈদুল আজহার কোরবানির জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, অন্যদিকে ঘরের বারান্দায় পানি উঠেছে। কোরবানি দেয়ার জন্য আনা গরু কোথায় রাখবো তা নিয়ে সমস্যায় আছি। পানি যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে বড় সমস্যায় পড়ে যাব।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, গত ২ দিন ভারী বৃষ্টিতে আমাদের অনেক গ্রামের বাসা বাড়িতে পানি উঠে পড়েছে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করে গ্রামবাসী আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। আমাদের এলাকায় ঈদের আমেজ নেই। 

দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মোশাররফ ইবনে রুকন বলেন, দিন দিন নদী ও হাওরের পানি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ফলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসতে পারতেছেনা।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহার নিগার তনু জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার কয়েক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ১৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদের হট লাইন নাম্বার ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে, এছাড়াও তাৎক্ষণিক যে কোন এলাকায় পৌঁছার ব্যবস্থা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ