কারাগারের ছাদ ফুটো করে যেভাবে পালাল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি

  © সংগৃহীত

বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি একসঙ্গে ছিলেন ২৫ দিন। সেখান থেকেই তাঁরা ছাদ ফুটো করে পালানোর পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তাঁরা বাইরে থেকে ছাদ ফুটো করার যন্ত্র সংগ্রহ করেন। ছাদ ফুটো করার পর একাধিক বিছানার চাদর গিঁট দিয়ে রশি হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই রশি দিয়েই কনডেম সেল থেকে বের হয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান তাঁরা। তবে প্রায় ১৪ মিনিট পরই শহরের প্রধান মাছের আড়ত চাষিবাজার এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর প্রেস ব্রিফিং থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বগুড়া জেলা কারাগার থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটের দিকে ছাদ ফুটো করে রশির মাধ্যমে প্রাচীর টপকে পালান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ বুধবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারের মাছের আড়ত এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি হলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু (কয়েদি নম্বর ৯৯৮), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার আমির হোসেন (কয়েদি নম্বর ৫১০৫), বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (কয়েদি নম্বর ৩৬৮৫) এবং বগুড়ার কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার ফরিদ শেখ (কয়েদি নম্বর ৪২৫২)।

ওই ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আজ সকাল সোয়া ১০টায় নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৩টা ৫৬ মিনিটে কারা তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে জানতে পারি, কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সদর থানা, সদর ফাঁড়ি এবং ডিবি পুলিশকে মাঠে নামানো হয়। মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় বুধবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে সদর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের টহল দল ওই চার কয়েদিকে শহরের চাষিবাজার মাছের আড়ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর কয়েদিদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। কারাগার থেকে সরবরাহ করা ছবি দেখে কয়েদিদের শনাক্ত করা হয়।’

সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেল পালানো চার কয়েদি জানিয়েছেন, কনডেম সেলে বসেই তাঁরা পালানোর পরিকল্পনা করেন। রাত তিনটার পর তাঁরা কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে বাইরে বের হন। এরপর বিছানার চাদর গিঁট দিয়ে দড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কারা ভবনের প্রাচীর টপকান। এরপর কারাগারের প্রধান ফটকের পাশ দিয়ে করতোয়া নদীর সেতুর নিচ দিয়ে নেমে তাঁরা পালিয়ে যান।

এদিকে, বগুড়া কারাগারের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম আজ সকাল ১০টায়  এ তথ্য নিশ্চিত করেন। কমিটির প্রধান হলেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কমিটিতে জেলা পুলিশ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জেলা কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না এবং নিরাপত্তাব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ