সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে মাভাবিপ্রবি সিআরসি

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে সিআরসি
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে সিআরসি  © সংগৃহীত

সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু ও অসহায় মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন কাম ফর রোড চাইল্ড, যা সংক্ষেপে সিআরসি নামে পরিচিত। এটি একটি মানবিক, সেচ্ছাসেবী এবং অরাজনৈতিক  সংগঠন। সংগঠনটি মূলত পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে। মাভাবিপ্রবি সিআরসি প্রথমে পথশিশুদের ডাটা কালেকশন করে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে চেষ্টা করে। 

পথ শিশুদের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন: খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পূরণ করা এই সংগঠনটি প্রধান লক্ষ্য। এখানে সংগঠনের কর্মীদের মাধ্যমে পথ শিশুদের সাহায্য করা হয় এবং সাহায্যের জন্য সবাইকে আহ্বান করা হয়।  যা ইংরেজিতে কাম ফর রোড চাইল্ড। এটি ২০১৬ সালের ৫ই জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির স্লোগান “থেকে একসাথে যুক্ত, করব পৃথিবী পথ শিশু মুক্ত।”

সারাদেশ এবং পুরোবিশ্ব থেকে  পথশিশু মুক্ত করা, পথ শিশুদের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা  এবং কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই সংগঠনটি মূল লক্ষ্য। পথ শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা শিক্ষার উন্নয়ন করা, সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য একটি কর্মসংস্থানের সাথে সংযুক্ত করা অথবা এমন কোনো বিষয়ে দক্ষ করে তোলা যা দিয়ে তার জীবনকে সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারে।

পথশিশুদের যাতে অপরাধমূলক কাজে পরিচালিত করতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগীতা নিশ্চিত করা; সকল ধরণের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা; গৃহহীন শিশুদের জন্য আলাদা বাসস্থান গড়ে তোলা যেখানে থেকে তাদের সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার সকল বিষয়ে দক্ষ গড়ে তোলা সম্ভব হবে; সমাজের কোনো শিশুদের যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে ব্যবহার করতে না পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পথশিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী এবং বিভিন্ন খাবার বিনামূল্যে সরবরাহ করা; সংগঠনের সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসবের সময় তাদের জন্য বিনোদনের আয়োজন করা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের অনেক বড় একটি বিষয় হিসেবেও কাজ করবে; পথশিশু এবং সুবিধাবস্থিত শিশুদের জন্য সমাজের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি করা; প্রতিটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং তাদের পুষ্টি চাহিদা বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া, মাদকাসক্ত পথশিশুদের সুন্দর জীবন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, পথশিশু মুক্ত পৃথিবী গড়া।

মাভাবিপ্রবি সিআরসি সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করে। এখান থেকে নিয়মিত সেবা পেয়ে থাকে ৩৪ জন পথ শিশু। এছাড়াও প্রতিবছর বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বাবদ শহর এবং ক্যাম্পাসের পাশের এলাকা থেকে অনেক শিশু এই সেবা পেয়ে  থাকে। নিয়মিত ঈদ বস্ত্র এবং শীত বস্ত্র পেয়ে থাকেন প্রায় ১০০ জন শিশু। বর্তমানে সারাদেশে সিআরসি ৮টি শাখা রয়েছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম একটি শাখা। এটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৭ নাম্বার রুম থেকে যাত্রা শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৫ জন তরুণ মেধাবী মুখ নিয়ে যাত্রা শুরু করে সিআরসি মাভাবিপ্রবি শাখা। চিন্তা-ভাবনা ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া, সুবিধা বঞ্চিত, অবহেলিত এবং পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করা। তারা যাতে স্বাভাবিক শিশুদের মতো সমাজে বেড়ে উঠতে পারে, কোন ধরনের অপরাধ বা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে  যুক্ত  না হয়, নিজেকে সুনাগরিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং নিজেদের মৌলিক ও মানধিকার ও শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে সেভাবে গড়ে তোলা। এই সিআরসি শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন সাইফুল মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক রাহাত সিকদার। প্রথম কমিটির সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। বর্তমান কমিটির সদস্য সংখ্যা শতাধিক। উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী। মাভাবিপ্রবি শাখা সারাদেশে দুই বার সেরা শাখা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক রাহাত সিকদার বলেন, “থেকে এক সাথে যুক্ত করবো পৃথিবীর পথশিশু মুক্ত।”এই স্লোগান নিয়ে সিআরসি প্রথম যাত্রা শুরু করে খুলনায় ২০১৬ সালের ৫ই জুন। তাদের কার্যক্রম, চিন্তাভাবনার সাথে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের। 

তাদের সাথে এক হয়ে কাজ শুরু করে সিআরসি- মাভাবিপ্রবি শাখা, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে- সাইফুল মজুমদার (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ), প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক- আমি মো. রাহাত শিকদার (সিপিএস বিভাগ) । সংগঠনের মূল প্রতিষ্ঠাতা খুলনার মেধাবী তরুন রাসেল আহমেদ রাজু। সিআরসি- মাভাবিপ্রবি শাখায় তখন যারা পাশে ছিলেন তারা হলেন- রিফাদ আহমেদ, আরিফুর রহমান, শিব্বির হোসাইন, রাফি, রুবেল মাহমুদ, সৌরভ, রাসেল মাহমুদ, মজিবুল্লাহ, জান্নাত মৌ, মাহমুদা মীম, তাসনিম রিদি, মেহজাবিন মম, তাজিম চৌধুরী, মোস্তফা ফয়সাল, সাজ্জাত হোসেন, মুনা, তৌকির আহমেদ, মাইমুনা মৌ, মেজবাহ রাহাতসহ আরো অনেকে।তাদের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই সিআরসি। শুরুর দিকের পথচলা এতটা সহজ বিষয় ছিল না। বিশ্বাস, ভ্রাতৃত্ব ও আত্নবিশ্বাস থেকেই জন্ম হয় সিআরসির।

তিনি আরো বলেন, স্যার উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোন -সন্তানের প্রতি পিতামাতার তিনটি দায়িত্ব চিহ্নিত করেছেন: রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষা এবং শিক্ষা।আধুনিক ভাষায়, সন্তানের পিতামাতার কাছ থেকে এগুলি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যারা পথশিশু তাদের অবস্থান কোথায় ? তাদের ও সামাজিক মর্যাদা , ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে   UNCRC যারা শিশুদের মানবাধিকার নিয়ে, সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে, তাদের প্রতিবেদনে মাঝে মাঝে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে শিশু নির্যাতন ও শিশুশ্রম নিয়ে। বাংলাদেশে প্রায় ৭-৮ লক্ষ পথশিশু আছে যাদের স্থান হয়- ফুটপাত, রেললাইন ,রাস্তার ধারে কিংবা কোন খোলা জায়গায়, নেই মা-বাবার ভালবাসা, নেই কোন অধিকার ।

তাদের অবস্থানে আজকে হয়তো আমি, আপনি থাকতে পারতাম, কিন্তু আল্লাহপাক সেটি করেন নাই। সে মানবিক চিন্তাধারা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা, ক্লাস, পরীক্ষার মাঝে যতটুকু সময় পেয়েছি এ মানবসেবায় নিজেকে নিবেদিত করেছি। পাশে পেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের  অনেক মানবিক শিক্ষকদের যাদের মন - মানসিকতা ও উদারতা মহৎ ও উন্নত। বর্তমানে সিআরসি ফাউন্ডেশন নামে একযোগে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জেলায় সিআরসি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। মানবতার সেবক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য সহযোদ্ধা, মানবিক এই সংগঠনের অংশ হতে পেরে এবং এই সংগঠন নিজ কাম্পসে প্রতিষ্ঠা করতে পেরে আমি আজ আনন্দিত। কেননা ভালবাসার এই সংগঠন আজ হাসি ফুটাচ্ছে ছিন্নমূল, সুবিধাবঞ্ছিত অসংখ্য পথশিশু ও অসহায় মানুষের মুখে। বিভিন্ন সমালোচনা ও নানা বাঁধা পেরিয়ে সিআরসি- মাভাবিপ্রবি শাখা আজ ষষ্ঠ মেয়াদে কমিটি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নিজ ক্যাম্পাসে। সারা দেশে প্রায় ১০০০ হাজার শিশুর মাঝে ঈদবস্ত্র, কয়েকটি স্কুল পরিচালনা, শিশুদের গুরতর অসুস্থার চিকিৎসা , বিভিন্ন সময় এতিম মাদ্রাসার শিশুদের মাঝে খাদ্য ও শিক্ষা সামগ্রী  বিতরণসহ নানা কাজে যুক্ত হয়েছে প্রিয় সংগঠন সিআরসি। সিআরসি পরিবারের সদস্যরা আজ মানবতার সেবক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে পথশিশুমুক্ত দেশ তৈরিতে। এভাবেই সি আরসি এগিয়ে যাচ্ছে পথশিশুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।

মাভাবিপ্রবি সিআরসি’র বর্তমান সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, মানবসেবায় নিয়োজিত এই সংগঠন সিআরসি'র বর্তমান ৩০ থেকে ৩৫ জন একটিভ কর্মী রয়েছেন।ক্যাম্পাসের ভিতরে সিআরসি একটি স্কুল পরিচালনা করে থাকে। শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে নিয়মিত, গত ডিসেম্বর মাসে একটি এতিম শিশুর ভাঙ্গা পায়ের চিকিৎসা করা হয়েছে এবং শিশুটিকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় সরকারি শিশু পরিবারে ভর্তি করা হয়েছে। রমজান মাসে ১০০ জন এতিম শিশুর মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়েছে।  ইদের সময় ৭০জন শিশুকে নতুন জামা উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় শিশু দিবসে শিশুদের মাঝে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা পুরস্কার বিতরণ ও খাবার প্রদান করা হয়েছে।

এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য সহায়তা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। বিনামূল্যে তাদের মোবাইল, ব্যাগ, ঘড়ি ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করাও হয়েছে। ক্যাম্পাসের পাশের এলাকায়, শিশু ও অসহায় মানুষদের চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিপদে যারা আমাদের  শরণাগত হন তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করা হয়। আর এই কাজগুলোর মাধ্যমে, এই সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও অসহায় মানুষগুলোর মুখে কিছুটা হাসি ফুটানো যায়, দিনশেষে আমরা যারা সিআরসি কর্মী এটাই আমাদের প্রাপ্যতা। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু সময় ব্যয় করে আমারা মানুষের জন্য যে কাজ করি এটা শুধু আমাদের আত্নিক তৃপ্তি আর কিছু নয় এবং আমরা মনে করি আমরা যেহেতু পাব্লিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি,জনগণের টাক্স এর টাকায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় তাই সমাজের প্রতি এবং সাধারণ, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া শিশু ও মানুষগুলোর জন্য কিছু সেবামূলক কাজ করা আমাদের একটা দায়িত্ব।

আমরা প্রতিটি সদস্য মাসিক ৩০ টাকা করে সংগঠনে ডোনেশন করে থাকি এবং আমাদের সিনিয়র কর্মীরা এবং উপদেষ্টা শিক্ষকমণ্ডলীগন সংগঠনে ডোনেশন করে। এই টাকাগুলো দিয়ে আমরা উক্ত কার্যক্রম গুলি করে থাকি। শুধু টাংগাইলে না প্রায় ৮টি শাখা থেকে সারা বাংলাদেশেই সিআরসি এই কার্যক্রম গুলি পরিচালনা করে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমরা থেকে একসাথে যুক্ত করবো পৃথিবী পথ শিশু মুক্ত। সি আর সি থেকে এই সেবাগুলো আমরা যেন দেশের সকল প্রান্তে  সকল  সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশু ও অসহায় মানুষদের মাঝে পৌঁছেদিতে পারি এর জন্য সবাই দোয়া করবেন।সকলের সহযোগিতায় সিআরসি মানুষের মাঝে চিরদিন কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence