বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ-ইফতারে আপত্তি, মঙ্গল শোভাযাত্রা-পূজায় আপত্তি নেই: চরমোনাই পীর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০৬:৪৯ PM , আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ০৬:৫২ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ-ইফতারে বাধা দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেছেন, মুসলমানদের জন্য করা সলিমুল্লাহর ইউনিভার্সিটিতে নামাজ, ইফতার করতে আপত্তি থাকলেও মঙ্গলশোভা যাত্রা করতে কোন আপত্তি নেই।
শুক্রবার (১০ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের করণীয়’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে একথা বলেন চরমোনাই পীর।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, যারা শরীফ শরীফার মধ্যে কোনও কিছু দেখে না তারা আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী। ওরা ইসলাম ও দেশের দুশমন। এই সরকার তাদেরকে অর্থ দিয়ে লালন-পালন করছে। একটি জাতিকে পরিবর্তনের জন্য দুইটি জিনিস প্রয়োজন। একটি শিক্ষা এবং আরেকটি সংস্কৃতি। আজ শিক্ষাঙ্গনে কী চলছে? আনন্দবাজার পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয় সেই ছবি দিয়ে আমাদের পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আগে বাবার মাথায় টুপি ছিল, মায়ের মাথায় কাপড় ছিল। সেখানে সেই বাবার মাথার টুপি মায়ের মাথার কাপড় সরানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নবম-দশম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কৃষি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হতো। কিন্তু সেটা বাদ দেয়া হয়েছে। এখন নিয়ে আসা হয়েছে শিল্প সংস্কৃতি। শিল্প সংস্কৃতিতে তবলা, ঢোল, হারমোনিয়াম নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে একটা বাচ্চা কীভাবে মেয়েদের সঙ্গে হাত ধরতে নাচবে, গায়ে হলুদে কীভাবে ‘ড্যান্স’ দিবে, তা প্র্যাক্টিকালি দেখাতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মা দুর্গার পোস্ট করতে আপত্তি নেই, শ্রীরাম বলতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মুসলমানরা ইসলামের কথা বললে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে রব্বী জিদনি ইলমা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। সলিমুল্লাহর দেয়া জায়গায় গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ পড়তে আপত্তি, ইফতার করতে আপত্তি কিন্তু শোভাযাত্রা কিংবা পূজা করতে আপত্তি হয় না।
বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মগজ বিকৃত কিছু বুদ্ধিজীবী শিক্ষা থেকে ইসলামকে দূরে রাখতে অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সংকীর্ণতা দূর করে লোভকে পরিহার করে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে ভবিষ্যতে প্রজন্ম ঈমান ইসলাম নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের দাবিগুলো হচ্ছে— বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক এবং দ্বীনদার শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা; পাঠ্যপুস্তকের সকল বিষয় থেকে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদা বিরোধী প্রবন্ধগুলো বাদ দেওয়া।
স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা; মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার, ইসলামিক স্কলার শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা; শিক্ষকদের স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে; প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা। সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।
এছাড়া ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্ব-স্ব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এবং পাঠ্য-পুস্তকের নামকরণ নিজ ধর্মের নাম অনুসারে করা; নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; শিক্ষার সকল ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা; পুরুষ ও মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক বেকারত্ব ও খাদ্য ঘাটতির সমাধান এবং অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে 'কৃষি শিক্ষা' ও 'গার্হস্থ্য বিজ্ঞান' শিক্ষা সকল শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং শিক্ষা নিয়ে আপত্তি ও বিতর্কের ঝড় সমাধানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও দ্বীনদার ইসলামিক স্কলারদেরকে নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা।