৯ মাসে এডিপির বাস্তবায়ন মাত্র ৪২.৩৯%

এবারও শিক্ষায় বরাদ্দকৃত বাজেটের বড় অংশই অব্যবহৃত থাকবে

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি  © লোগো

বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষা অবকাঠামো এবং উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) শুরুতে বিগত বছরের তুলনায় দেশের শিক্ষাখাতে ৬২ শতাংশ বেশি বরাদ্দের পর এবার তা কমানো হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে যেসব খাতে বরাদ্দ কমেছে শিক্ষা তার অন্যতম।

তবে অর্থবছরের শুরু বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তার অর্ধেকও ব্যয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি অর্থবছরের নয় মাস পার হলেও বরাদ্দের গড় হিসেবের ৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এবারও শিক্ষায় বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি বড় অংশই অব্যবহৃত থেকে যাবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি (জুন-২৩ থেকে মার্চ-২৪) প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৪৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর বাইরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ তাদের মোট বরাদ্দের ৪২ দশমিক ৫১ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। তবে শিক্ষায় সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। তাদের বাস্তবায়ন দক্ষতার হার মাত্র ৩৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। 

চলতি এডিপিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট ৯টি প্রকল্প রয়েছে এবং এতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ১২১ কোটি ১০ লাখ টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে রয়েছে মোট ৬৮টি প্রকল্প এবং বিপরীতে তাদের বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৫০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর বাইরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ২০টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

দেশীয় শিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বরাদ্দকৃত অর্থ সম্পূর্ণ খরচ করতে হলে চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে বাস্তবায়ন করতে হবে ৫০ শতাংশেরও বেশি কাজ। যা অনেকটাই অসম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গত মার্চে ১৮,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করে সরকার।


পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বিগত বছরের সংশোধিত এডিপির ১৮ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে শিক্ষা খাতের জন্য চলতি এডিপিতে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল বছরের শুরুতে। তবে চলতি বছরের মার্চে এতে সংশোধন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ফলে সংশোধিত এডিপিতে শিক্ষায় বর্তমান বরাদ্দ শিক্ষা খাতে ৭.০৩ শতাংশ। যা অর্থবছরের শুরুতে তৃতীয় সর্বোচ্চ খাত হিসেবে ছিল মোট এডিপির ১১.৩৬ শতাংশ।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ১,৪৮৮টি প্রকল্পে মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে এবং বাকি ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরবরাহ হবে বৈদেশিক সহায়তা থেকে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এছাড়া, গৃহায়ন  ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ, কৃষি খাতে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ১. দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ‘অদক্ষ’ ব্যবস্থাপনা, ‘কর্মপরিকল্পনার অভাব’ ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও সংস্থার মধ্যে ‘সমন্বয়হীনতার’র ফলে এডিপির একটি বড় অংশই ফেরত যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ বিগত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে মোট ৫৮টি প্রকল্পের ১৩টি প্রকল্পের কর্মকর্তারা কোনো টাকাই খরচ হয়নি। তখর বাকি প্রকল্পগুলোর আর্থিক খরচের অগ্রগতি ছিল মাত্র ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় চলতি বছরের গত ৩১ জানুয়ারি এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। ওই সভায় মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. একেএম শফিউল আজম বলেছেন, অর্থবছরের শুরুতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণীত না হওয়ায় আরএডিপিতে অর্থ হ্রাসের প্রস্তাব করতে হয়েছে।

শিক্ষার বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্পের বাস্তবায়নে অগ্রগতি পর্যালোচনার তথ্য বলছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অগ্রগতি ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাংলাদেশ স্কাউটের ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অগ্রগতি ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

শূন্য ব্যয় হওয়া ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে ইইডির দুটি, ব্যানবেইসের একটি, বাংলাদেশ স্কাউটের একটি এবং ইউজিসির ৯টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ‘সন্তোষজনক’ পর্যায়ে উন্নীতকরণের জন্য প্রকল্প পরিচালকদের তখন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

এসব প্রকল্পের মধ্যে থাকা ‘ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। গত সাড়ে সাত বছরে এই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।

প্রকল্পটির সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মীর জাহিদা নাজনীনের কাছে। সরকারের বিশেষ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এ পরিচালক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৬টি জমির (৬টি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্থান) উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং এপ্রিলে একটি জমির ‘সয়েল টেস্ট’ সম্পন্ন হবে। এ খাতে ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ভূমি উন্নয়ন ও নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বলেও জানান তিনি।

মাঠ পর্যায়ের নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে  মীর জাহিদা নাজনীন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে। তবে প্রকল্পের মাঝ পথে পরিচালক পরিবর্তন এবং জমি নির্ধারণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ