বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামালের ৫৩তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

যথাযোগ্য মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫৩তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দিনব্যাপী চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং ভোলায় আলীনগর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বীর নিবাস’ এ পারিবারিকভাবে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ভাইপো মো. সেলিম জানান, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল যে রেজিমেন্টে চাকুরিরত ছিলেন সেই চট্টগ্রাম সেনানিবাস দি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) জোহর নামাজ শেষে মোস্তফা কামালের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রেজিমেন্টের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রধান পাপা টাইগার মেজর আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। এছাড়াও ভোলার আলীনগরে তার বাড়ির পাশের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জামে মসজিদেও মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। সেদিন তিনি একাই লড়াই করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন সহযোদ্ধাদের প্রাণ। ১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টি। একইসাথে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারও পাল্টা গুলি করতে শুরু করলো। শুরু হলো সম্মুখ যুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন মেশিনগান। গর্জন করে উঠে তার হাতের অস্ত্র।

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোনও অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না। সংখায়ও অনেক কম ছিল তারা। আর পাকিস্তানি সৈন্যরা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি ও ভারি অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত তারা। হয় সামনাসামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয় পিছু হটতে হবে। কিন্তু পিছু হটতে হলেও সময় দরকার। ততক্ষণ অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এই মহান দায়িত্ব?

এমন সময় আরো একজন মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। ততক্ষণে মোস্তফা কামাল সকল সহযোদ্ধাকে সরে যেতে বলেন। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলে তিনি আবারো সবাইকে নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থমকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাক সৈন্য। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে পিছু হটেছেন। একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মারা যান মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পায়। দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয় জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।

 

সর্বশেষ সংবাদ