পড়ার টেবিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮

আবাসিক কক্ষে ভাঙচুর
আবাসিক কক্ষে ভাঙচুর  © সংগৃহীত

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে আট জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১ মে) রাত ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় কলেজের ছাত্রাবাসের অন্তত সাতটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। 

এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসন বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে মেডিকেল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় ও বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনির সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত আট শিক্ষার্থীকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আহতদের মধ্যে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী (৩০তম ব্যাচ) রিদওয়ান হক, একই ব্যাচের তালহা, নাদিম ও আরিফ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সীমান্ত, আলী হাসান, ইসমাম ও অপর্ণ নিলয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, তৃতীয় বর্ষের (৩১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফুয়াদ ছাত্রলীগ সভাপতি শৈশব রায়ের অনুসারী। একই ব্যাচের আলী হাসান সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গত মঙ্গলবার তাদের মধ্যে একটি পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে বুধবার রাতে ফুয়াদ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আলী হাসানের কাছে থাকা পড়ার টেবিলটি নিতে গেলে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রাপত ঘটে। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোফাজ্জলের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাইমিন রাইম ও সীমান্তকে অধ্যক্ষের নির্দেশে পুলিশ আটক করে। ছাত্রবাসের বাহিরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, সংঘর্ষে সাবেক নেতা মোফাজ্জলের সমর্থকদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম।

অন্যদিকে বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি অর্ঘ্য রায় ও তানভির আহমেদ সাকি, যুগ্ম সম্পাদক তোফায়েল তুষার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সম্পাদক ইলিয়াস হোসন।

শজিমেক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের নির্দেশে তার অনুসারীরা ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তারা কলেজের ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষে হামলা চালিয়ে তাণ্ডব চালান। এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

তবে সহ-সভাপতি অর্ঘ্য রায় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হোস্টেলে একটি পড়ার টেবিল নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দুই পক্ষ হয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে আগের মতো সংঘাত সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। এ হামলার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়। কলেজ প্রশাসনের তদেন্ত তা বেরিয়ে আসবে।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায় বলেন, পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বর্তমানে সিলেটে আছি। একটি টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির শিক্ষার্থী বিনা উসকানিতে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

শৈশব রায় আরও বলেন, মেডিকেল কলেজে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্মে জড়িত কতিপয় শিক্ষার্থী। তাদের কারণে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও হয়। কিন্তু কমিটির সুপারিশ আলোর মুখ দেখে না। সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে নতুন করে এ ঘটনা ঘটতো না।

জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনি বলেন, পড়াশোনা ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে আমি ক্যাম্পাস থেকে অনেক আগেই চলে এসেছি। গতকালের ঘটনা নিয়ে কিছু জানি না। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন তারাই বিষয়টি দেখবেন।

 

সর্বশেষ সংবাদ