চা বিক্রি করে জিপিএ-৫ পাওয়া স্মৃতির দায়িত্ব নিলেন ইউএনও

স্মৃতি পারভীনের বাড়িতে গিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা জানান ইউএনও
স্মৃতি পারভীনের বাড়িতে গিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা জানান ইউএনও  © সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় চা বিক্রির পাশাপাশি লেখাপড়া করে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন স্মৃতি পারভীন নামে এক ছাত্রী। ফল প্রকাশের পর তাকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইনের।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে ইউএনও মোশারেফ হোসাইন চা বিক্রেতা স্মৃতি পারভীনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় স্মৃতি পারভীন ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 

জানা যায়, স্মৃতি পারভীন বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চা বিক্রি করতেন। এই বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। হতদরিদ্র গাছ ব্যবসায়ী বাবা মো. হারুনার রসিদ দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্রে সংসার পাতলে স্মৃতিদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

সে সময় বৃদ্ধ দাদার সাথে চা বিক্রি করে অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরেন দু’বোন। দাদার মৃত্যুর পর মেধাবী শিক্ষার্থী হওয়া স্বত্ত্বেও জীবন যুদ্ধে সকাল থেকে পালাক্রমে দুই বোনকে সামলাতে হয়েছে দোকানদারি, তার পাশাপাশি চালিয়ে গেছে পড়ালেখা। 

এ বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় বোয়ালমারী কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের কারিগরি শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও ভবিষ্যৎ উচ্চশিক্ষা করতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে ছিল। কারণ বড় বোন মনিকা ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন।

আরও পড়ুন: দিনে কাজ করতেন, রাতে পড়ালেখা করে জিপিএ-৫ পেলেন স্মৃতি

আর ছোট ভাই স্থানীয় এসি বোস ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী। সে এতদিন কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ থেকে পড়ালেখার জন্য নানা সহযোগিতা পেয়েছেন। পাস করে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় সে। কিন্তু সেখানে অনেক খরচ, তাছাড়া দোকান না চালালে অনটনের সংসারে অন্য সদস্যদের জীবনধারণ অনিশ্চতার মুখে পড়বে।

একদিকে সংসার অন্যদিকে পড়ালেখা করে ভালো কোনো চাকরি করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সংশয়ে পড়েন স্মৃতি পারভীন। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত ২৬ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। তার ভবিষ্যৎ পড়ালেখার অনিশ্চয়তার বিষয়টি জেনে তিনি মেয়েটির পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং স্মৃতি পারভীনের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে তার দোকান ও বাড়িতে ছুটে যান।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক স্মৃতি পারভীন খোঁজ খবর নিয়েছি। বোয়ালমারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র মেধাবী এ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত উচ্চ শিক্ষার সকল দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানলাম তাদের নিজেদের বাড়ি নেই। তারা যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকতে চায় তাহলে দুই শতাংশ জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধা, শাহ জাফর টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত হোসেন লিটন, ময়না ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ।


সর্বশেষ সংবাদ