ঈদ বোনাসের টাকায় প্রতিবন্ধীকে রিকশা কিনে দিলেন পুলিশ সদস্য

রিকশাচালক মো. মিজানের সঙ্গে জিহাদ হাসান
রিকশাচালক মো. মিজানের সঙ্গে জিহাদ হাসান  © সংগৃহীত

বাক্‌প্রতিবন্ধী রিকশাচালক মো. মিজান অন্যদের তুলনায় যাত্রী পান কম। যাত্রী ডেকে তুলতে পারেন না। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তবে এখন মিজান নিজেই একটি রিকশার মালিক। তাকে এই রিকশা কিনে দিয়েছেন এক পুলিশ সদস্য।

জিহাদ হাসান তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ শাখার কনস্টেবল। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাওয়া বোনাস ও নিজের পুরস্কারের টাকা দিয়ে রিকশাটি কিনে দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১৬ জুন) নগরের দামপাড়া এলাকায় পুলিশ লাইনসের সামনে মিজানের হাতে রিকশাটি তুলে দেন জিহাদ।

সেখানে মিজানের আনন্দের অংশীদার হতে এসেছিল ছেলেদের দুজন। মিজান হাতের ইশারায় কথা বলছিলেন, আর প্রতিবেশী কুলসুম বেগম বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।

মিজান জানান, এক বেলা রিকশা চালালে মালিককে ৮০ টাকা দিতে হয়। সারা দিন চালালে দিতে হয় ১২০ টাকা। এরপরযে টাকা থাকে, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। মাঝেমধ্যে ধার করতে হয়। এখন রিকশার মালিক হওয়ায় দিনভর রিকশা চালিয়ে যে আয় হবে, তা পুরোপুরি সংসারের জন্য খরচ করা যাবে।

২০১৬ সালে পুলিশে যোগ দেন জিহাদ। বাবা মারা যাওয়ায় এখন মা-ছেলের সংসার। তিনি চট্টগ্রামে আর মা কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ১৮ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে চাল, ডাল, আটা, চিনি, তেল রেশন পান। ঈদের বোনাসের টাকা অচেনা লোকের জন্য খরচের বিষয়ে বলেন, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার কী আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না।

জিহাদ বলেন, দুটি ঈদের খরচের জন্য প্রতি মাসে কিছু করে সঞ্চয় করে রাখি। এগুলো দিয়ে ঈদের হয়ে যায়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে কোনো বছরবোনাসের টাকা নিজের জন্য খরচ করেননি। গত ঈদুল ফিতরেও এহসানুল আবেদীন (শিহাব) নামের এক ডেলিভারিম্যানকে বাইসাইকেলে কিনে দিয়েছিলেন।

জিহাদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এরপর পুলিশ থেকে পুরস্কার পাওয়া ১০ হাজার টাকা আর ঈদুল আজহায় বোনাসের ১২ হাজার ৮০ টাকার সঙ্গে নিজেরসহ ২৩ হাজার টাকায় রিকশাটি কিনেছেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ইচ্ছা থাকলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, তার প্রমাণ জিহাদ। তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সেই টাকা নিজে খরচ না করে এবার আরেকজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর মতো আরও অনেকের এগিয়ে আসা উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ