ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা: শিক্ষার্থীদের জন্য অনন্য মাধ্যম 

তানভীর আহম্মেদ
তানভীর আহম্মেদ  © টিডিসি ফটো

শুরুতে যদি বলি সংবাদ কি? এককথায় বলা যায় তথ্য কিংবা ঘটনার দর্পণ, যার মাধ্যমে জানা যায় কোথায় কি হচ্ছে। একটি বিষয়ের অদ্যোপান্ত, কোন ঘটনাবলির  প্রতিচ্ছবি। আর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে যারা কাজ করেই তারাই সাংবাদিক।

এই সাংবাদিকতা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তান্মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। একটি ক্যাম্পাসের হাজারো গল্পে জড়িয়ে থাকা শব্দগুলো তুলে ধরার একমাত্র মাধ্যমই হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।

তরুণ  শিক্ষার্থীদের মেধা, পরিশ্রম, গুণাবলি, সাহসিকতা, মানবিকতা, দক্ষতা, যোগ্যতা এক সময় দেশের মেরুদণ্ড হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর সে সবকিছুর সহায়ক হিসেবে কাজ করে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা৷ কেননা, সৃজনশীল মনোভাব, পড়াশোনার পাশাপাশি অতিরিক্ত কারিকুলাম, নেতৃত্বগুণ, কথা বলার দক্ষতা, সাংগঠনিক হিসেবে গড়ে তোলা, তথ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা, চঞ্চলতা, সব জায়গায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চমকপ্রদ মানসিকতা এর মাধ্যমেই তৈরী হয়।

শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা ক্যাম্পাসের ঘটনাবলি বহিঃবিশ্বের কাছে যেভাবে তুলে ধরছেন এতে করে তাদের বৈশিষ্ট্য এবং তরুণদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার চমৎকার বিষয়টিও ফুটে উঠছে। একইভাবে ক্যাম্পাসকে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নানাবিধ সমস্যা, দুর্নীতি, অনিয়ম ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে যে নৈতিকতা বা প্রতিবাদী মানসিকতা তৈরী হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতুবন্ধন হিসেবে চমৎকার মাধ্যমও বটে। অনেকক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরির চরম কাজটি মূলত এই সাংবাদিকরাই করে থাকেন। ক্যাম্পাসের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষার্থীদের আনন্দ-কষ্ট, সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত সবার কাছে পরিচিত কর তুলে ধরতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকগণ।

তবে, এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মাঝে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিবন্ধকতা, তিরষ্কার, ভয়ের মতো বিষয়ও। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক দলের নানা বাধা-বিপত্তির, নিষেধাজ্ঞা , নিয়ম-কানুন বড় চ্যালেঞ্জ। পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ, রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

আরও পড়ুন: চরমোনাইয়ের বক্তব্য ঠিক নয়, ধর্মশিক্ষা সম্প্রসারিত হয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী।

কিছু সংবাদ করতে গিয়ে হুমকি-ধমকি কিংবা প্রাণনাশের ভয়ও করতে হয়। মাঝে মাঝে প্রশ্ন উঠে পরিচয়েরও। আমি ছাত্র না সাংবাদিক এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় অহরহ। সময় আর পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনো সাংবাদিক আবার কখনো ছাত্র হয়ে উঠতে হয়। এত সব কিছুর মাঝে নিজেকে সৎ, ন্যায়ের পথে ধাবিত করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যে ইতিহাস নির্মাণ করেছে সাংবাদিকেরা তা বলার বাহিরে।

কখনো, রোদ আবার কখনো বৃষ্টি, রাত কি দিন, সময় কি অসময় তথ্যের পিছনে ছুটতে গিয়ে মনে থাকে না আসলে সে আদৌ মানুষ, ছাত্র না সাংবাদিক। পড়াশোনার পাশাপাশি এই যে এতটা চাপ সামলে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মজা কতটা সে একমাত্র এরাই বুঝে। জীবনের দোলাচলে সাংবাদিক যেন বিদ্যুতের ঝলক। ছাত্র জীবনে যারা এসব করে ভবিষ্যতে পা রাখে তারা দেশের কতটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠে  বলার বাহিরে।

তথ্যজ্ঞান ও ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজে যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে তেমনি অন্যকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে এই সাংবাদিকতা। তাইতো সাংবাদিকতা মহান পেশা এটা বহুলভাবে প্রমাণিত। যদি ভাবেন তথ্য, বিপত্তির মাধ্যমেই সাংবাদিকতার শেষ তাহলে ভুল ভাবছেন। সাংবাদিকতায়  মজাও আছে বিশেষ করে এই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় আরো বেশি। নিজের কোন কাজে যখন সমাজের পরিবর্তন ঘটে, ভালো কিছুর সৃষ্টি হয়, কোন পজিটিভ বিষয় তৈরী  হয়, কারো উপকার হয় তখন সে আনন্দ ধরে রাখা যায় না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এক নিউজে প্রশাসনের চোখ খুলল, সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পেল, রাস্তা সংস্কার হলো, অনিয়মে মানুষ স্বোচ্ছার হলো, দুর্নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হলো, হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফেরত পাওয়া গেল, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার খরচ মেটাতে সাহায্য পাওয়া গেলো ইত্যাদি। নানা ধরনের প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত অতিথি, সবার সম্মানের জায়গা, কারো খুঁশিতে খুঁশি হওয়া, পরিচিত বাড়ানো, যোগাযোগ বাড়ানো, নিজেকে অন্য জায়গায় আবিষ্কার করা, যে কোন জায়গায় বিনা বাঁধায় উপস্থিত হতে পারা কিংবা ভিন্ন এক পরিচয় ধারণ করাতে যে আনন্দ তা সাংবাদিকেরাই বুঝে।

সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রখর দৃষ্টিজ্ঞান, অনুসন্ধানী মন, তীক্ষ্ণ , বুদ্ধি, জানা-অজানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠা তাদের অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে বহুগুণে। হলুদ সাংবাদিকতার তকমা এড়িয়ে অক্লান্ত শ্রম আর বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কলমযোদ্ধদের লড়াই যেন জীবনের জয়গান।

 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ