ভালোবাসা তাদের ঘরে!

ইনসেটে লেখক
ইনসেটে লেখক   © সংগৃহীত

অনন্ত জলিল সাহেব নিদেনপক্ষে হাজার কোটি টাকার মালিক। খেয়াল করুন, এমন ধনাঢ্য একজন ব্যবসায়ী , চাইলে ডজন ডজন গার্লফ্রেন্ড/ শয্যাসঙ্গিনী জোগাড় করা যার জন্য ডালভাত, সেই তিনি নিজ স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নায়িকার সাথে অভিনয় পর্যন্ত করেন না!

একই কথা বর্ষার দিক থেকেও খাটে। দীর্ঘাঙ্গিনী, রূপবতী, সাবেক মডেল। চাইলে ঈর্ষনীয় শোবিজ ক্যারিয়ারের পথে যিনি হাঁটতে পারতেন অবলীলায়, সেই তিনি স্বামী ব্যতীত অন্য কারো পর্দা সঙ্গী হবার কথা আনেন না ভাবনার চোরাগলিতেও।

নারীবাদীরা এসবের মধ্যে সংকীর্ণতা খুঁজে পেতে পারেন, কিন্তু আমার কাছে এটাই ভালোবাসা। সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে, পাওয়া- না পাওয়ার হিসেবনিকেশকে পায়ে দলে সঙ্গীর প্রতি কমিটমেন্টের জায়গায় অবিচল থাকতে পারার নাম ভালোবাসা-ই তো! আপনার সংজ্ঞার সাথে মিলুক,চাই না মিলুক! কী, এখন প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রে রে করে তেড়ে এসে সুধাবেন- আরেহ অনন্ত-বর্ষা তো অভিনয় জানে নাহ! মানছি ভাই, মেনে নিলাম।

তবে একটা কথা! এতদিন এই দম্পতির অনলাইন, অফলাইন উপস্থিতি অনুসরণ করে যতটুকু ধারণা পেয়েছি, জেনেছি, বুঝেছি- "অভিনয় জানে না" কথাটা পর্দার পাশাপাশি তাদের বাস্তব-জীবনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে খাটে কিন্তু।

ব্যবসায়, সিনেমা নির্মাণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা সবই চলছে ঠিক, কিন্তু শতভাগ মনোযোগ দিয়ে অনন্ত-বর্ষা সম্ভবত কাজ একটিই করেন- সংসার। এখানে ধ্যানজ্ঞান সব নিবদ্ধ বলেই কি এত-এত পয়সা খরচ করে বানানো তাদের সিনেমার অভিনয়, মেকিং, গল্পের ধারাবাহিকতায় এমন অযত্ন অসম্পূর্ণতার ছাপ? হয়তো সিনেমা তাদের কাছে কেবলই একটা শখ পূরণের প্রকল্প। পয়সা আছে,সুদর্শন লুক আছে, পরস্পরের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা অটুট রেখে শখ পূরণে বাধা কী! 

সমালোচকেরা এবার নিশ্চয়ই বুঝে নিবেন, এই দুইজন কেন তাদের বিপরীতে অন্য কাউকে অ্যালাও করেন না! কেন নিজেদের উচ্চারণ ত্রুটি সংশোধন বা নাচের মুদ্রা শুদ্ধিকরণের চাইতে সপরিবার দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ানোতে তাদের এত আগ্রহ! এখন আপনি যদি 'বর্ষা অনন্তের তিন নম্বর বিবি'- এমন কাল্পনিক তথ্য বিশ্বাস স্থাপন ও প্রচার করে সুখ-বিলাসী হয়ে থাকেন, আপনার দৃষ্টিতে অনন্ত-বর্ষা ক্ষ্যাত বলে তাদের ভালবাসার প্রকাশও যদি আপনার কাছে বড্ড পুরনো মডেলের আর সেকেলে ঠেকে, তাহলে বলব, মিয়াভাই আপনি মুড়ি খান। মুড়ি কিনার পয়সা না থাকলে নক দিয়েন, আমি কিনে পাঠায় দিবনে!

আমার কেন যেন মনে হয়, যত চেষ্টাই করুন না কেন, অনন্ত-বর্ষা জুটি তাদের ফিল্ম ক্যারিয়ারে একদমই সফল হতে পারবেন না। তাদের অভিনয় দক্ষতার অভাব অবশ্যই এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ। তবে এর পাশাপাশি আমাদের পরশ্রীকাতরতা আর অন্যকে বুলিয়িং করে মজা পাওয়া অসুস্থ মানসিকতাও এতে যৎসামান্য ভূমিকা রেখে থাকবে। যা হোক, অনন্ত-বর্ষা ইস্যুতে এটাই সম্ভবত আমার শেষ লেখা।

শুধু এটুকুই বলে যাই, কপটতা-ভণ্ডামিতে ছাওয়া, মিথ্যের বেসাতিতে ভরা এই যুগে 'বিরল' 'আসল' ভালোবাসার প্রতিনিধিদের হোক জয়। 'অনন্ত' কাল ধরে ভালবাসার 'বর্ষা'য় এমনই সিক্ত থাকুন তারা। নায়ক-নায়িকা অনন্ত-বর্ষা নন, দম্পতি অনন্ত-বর্ষার জন্য সর্বশেষ শুভ প্রত্যাশা কণ্ঠশিল্পী আবিদার গাওয়া আমার প্রিয় একটি গানের সাথে মিলিয়ে- 'ভালবাসা তাদের ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক'।

লেখক: শামীম আনোয়ার
বিসিএস (পুলিশ)
সহকারী পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম।


সর্বশেষ সংবাদ