আমার আর কোনো অবলম্বন-প্রাপ্তি-প্রত্যাশাও নেই: আনু মুহাম্মদ

আনু মুহাম্মদ
আনু মুহাম্মদ  © সংগৃহীত

দীর্ঘ চল্লিশ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ৩০ জুন) শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এর আগে ২৯ জুন ছিল তার শেষ কর্ম দিবস। আজ বুধাবর অবসর জীবন নিয়ে তার ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি লিখেন, আমার আর কোনো অবলম্বন নেই, আর কোনো প্রাপ্তি নেই, আর কোনো প্রত্যাশাও নেই। 

সেই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত’ শব্দটা আমার একদমই পছন্দ নয়। তবুও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকতা থেকে অবসর নেবার পর্বে প্রবেশ করলাম। এর প্রস্তুতিমূলক ছুটি শুরু হলো, বছর বছর তরুণ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হবার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লো। তাদের সাথে অসংখ্য স্মৃতি আমার সাথে থেকেই যাবে, এর অভাব আমি সবসময়ই অনুভব করবো। এই অভাব পূরণ হবার নয়।

আরও পড়ুন: এমপিওভুক্ত হলো ২ হাজার ৭১৬ প্রতিষ্ঠান

ঘটনাক্রমে এই পর্ব শুরু হবার সময়েই উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত জাবি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এক সম্মেলনের তারিখ পড়েছে, দুদিন পর সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছি। প্রবাসে তিন শতাধিক অগ্রজ, অনুজ প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সাথে এই সময়ে দেখা হওয়া ছিল খুবই আনন্দের বিষয়। গত কয়দিনে সম্মেলনে এবং ফেসবুকে, মেইলে ও বার্তায় প্রিয় শিক্ষার্থীসহ বহু বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা, প্রত্যাশা, আস্থা ও ভালোবাসার কথা জেনেছি। কঠিন সময় ও ভয়ংকর প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ এভাবেই মানুষের কাছ থেকে শক্তি পায়, উষ্ণতা পায়, প্রেরণা পায়। 

আমার আর কোনো অবলম্বন নাই, আর কোনো প্রাপ্তি নাই, আর কোনো প্রত্যাশাও নাই। আমি সবাইকে নিয়ে সক্রিয়ভাবে বেঁচে থাকার শক্তি পাই মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা থেকে, প্রাণ প্রকৃতির বার্তা থেকে, দায়বোধও প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে তারই স্পর্শে। তাই অনেক বন্ধুর দাবি ঠিক- অবসর নেবার উপায় নাই। সাহস ও প্রেরণা দেবার জন্য আমি সবাইকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই।

১৯৫৬ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের পুরো নাম আনু মুহাম্মদ আনিসুর রহমান। তবে তিনি আনু মুহাম্মদ নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৮২ সালে জাবি’র (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের) অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগেও শিক্ষকতা করেছেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিশ্বব্যাপী শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্য বিরোধী তত্ত্বচর্চা ও লড়াইতেও সোচ্চার ছিলেন। বাংলাদেশে মার্কসীয় অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি সবচেয়ে পরিচিত লেখক।

বিশ্ব পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশের অনুন্নয়ন, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজ, উন্নয়নের রাজনীতি, বিশ্বায়নের বৈপরীত্যসহ মোট ৩৩টি বইয়ের লেখক তিনি। এছাড়া একটি নিউজ পোর্টাল ও একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনার সাথেও তিনি জড়িত আছেন।


সর্বশেষ সংবাদ