বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষকও এইসব র‌্যাঙ্কিং বিশ্বাস করে না

  © ফাইল ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ হলে, আমাদের দেশে একটা কানাঘুষা, হাপিত‍্যেশ শুরু হয়। দেশের ইউনিভার্সিটিগুলো যে বিশ্বমানের নয় এটা মানুষ টের পায়। শিক্ষার্থীদের ভিতর দুঃখবোধ তৈরি হয়। তারা মনঃস্তাত্বিকভাবে উদ্যোম অনুপ্রেরণা হারায়। রাজনীতিকরা অবশ্য এইসব র‍্যাঙ্কিং-ফ‍্যাঙ্কিং ধার ধারে না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের না হলেই তাদের জন্য ভালো—তাহলে মেরুদণ্ড সোজা করে কথা বলার মানুষ তৈরি হবে না। কারণ, কথা বলাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড়ো অপরাধ! বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষকও এইসব র‍্যাঙ্কিং বিশ্বাস করে না। বরং তারা মনে করে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বিশ্বসেরা পাঠ হয়। তারা প্রচার করে, টাকা-পয়সার দৌঁড়ে আমরা পিছিয়ে থাকি বলেই, আমাদের নাম থাকে না।

বিশ্বমানের বিদ্যাপীঠের ধারণাটা আমাদের দেশের খুব বেশি মানুষের ভিতর নেই। যাদের ভিতর আছে, তারা সংখ‍্যায় কম। তবে আশার বিষয় হলো, এগুলো নিয়ে বর্তমান তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ভাবে। তারা কথা বলে। আগে এইসব নিয়ে তেমন আলোচনা হতো না। দেশের অনেক তরুণ শিক্ষক বিদেশ থেকে ফিরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন দেখে। আমি অনেক তরুণ শিক্ষকদের চিনি, যারা প্রচণ্ড দুঃখবোধ আর কষ্ট চেপে রেখে চলমান পরিবেশে শ্রম ও মেধা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানের মতো করে গড়ে তোলার উদ‍্যোম তাদের মধ‍্যে প্রকট। কিন্তু সীমিত সংখ‍্যক এই উদ্যমীদের দিয়ে চলমান দুষ্ট চক্রকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া সহজ নয়।

২০২০ সালে এসেও, বৈশ্বিক মানদণ্ডের বিদ্যালয় গড়তে যেসকল পদক্ষেপ নেয়া উচিত সেগুলো আমরা শুরু করতে পারিনি। এখনও যদি সেসব পদক্ষেপ সঠিকভাবে কার্যকর করি, তাহলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের করতে প্রায় দুই-তিন যুগ লেগে যাবে। যখন ভাবি, ২০৫০ সালে দেশের অনন্ত দশটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রথম দুইশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকবে না, তখনই শিউরে উঠি। মন খারাপ হয়! ইউনিভার্সিটিগুলোকে আমরা তৈরি করেছি রাজনীতির চাষাবাদের জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এই দোষে দুষ্ট প্রতিটি সরকার। কেউ আর এই লাগামহীনতাকে টেনে ধরতে চায়নি। যে দেশের ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল কাগজপত্রে নেতা-নেত্রীর ছবি সমৃদ্ধ শ্লোগান দেয়া থাকে, সেখানে চিত্ত ভয় শূন্য, উঁচু শির সম্পন্ন মানুষ তৈরি করা যায় না।

শিক্ষকদের নিয়োগে যেখানে শুধু ও শুধুমাত্র মেধাকেই গুরুত্ব দেয়া হয় না, সেখানে জ্ঞানের চেয়ে বড়ো হয়ে উঠে সনদ। সৃষ্টিশীলতার চেয়ে বড়ো হয়ে উঠে জিপিএ। বিদগ্ধ ধীমান মানুষ হওয়ার নিরন্তর নিমগ্ন ধ‍্যানের চেয়ে বড়ো হয়ে উঠে চামচামি ও পদ! আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সৌম‍্য মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বড়ো হয়ে উঠে রাজনৈতিক ক্ষমতা-পরিচয়। শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক জ্ঞানানন্দের চেয়ে বড়ো হয়ে উঠে প্রশাসনিক পদ লোভ! আর এই কদার্য হীন চর্চার মধ‍্যেও ক্ষীণ আলো নিয়ে দেদীপ‍্যমান থাকে কিছু শিক্ষক! যারা সংখ‍্যায় কম। যাদের ত‍্যাগ মলিন হয় কর্দযদের ভীড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন বিশ্ব মানের নয়, সেগুলো নিয়ে আমাদের প্রচুর আলোচনা হওয়া উচিত। যুক্তি তর্ক হওয়া উচিত। ভুলগুলোকে স্বীকার করা উচিত। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, পুরানো-প্রচলিত-অকার্যকর-অনাধুনিক নিয়ম-নীতিগুলোকে মুছে ফেলার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কোন পরিবর্তনকে বা পরিবর্তনের ধ্বনিকে ব‍্যক্তিগত আঘাত-আক্রমন হিসেবে মনে না করে, দীর্ঘদিনের চলমান একটা অনাধুনিক সিস্টেমের পরিবর্তন নিয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, দেশের যদি একশো শিক্ষকও প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পশ্চাৎপদতার কারণ নিয়ে সোচ্চার হয়, কণ্ঠ তোলে, তাহলে আগামী দশ বছরে অনেক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বহু শিক্ষক কথা বলতে সংকোচ বোধ করে। শংকা বোধ করে। এই সংকোচ-শংকা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। দায়বোধ থেকে, দায়িত্ব থেকে, অনাগতের জন্য বিশ্বমানের বিদ্যাপীঠ উপহার দেয়ার লক্ষ‍্যে।

নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence