ফেলোশিপের আবেদনে অর্থ ঢালার নজির রাবির কাছে প্রথম দেখলাম

এসএম নাদিম মাহমুদ
এসএম নাদিম মাহমুদ

সকালেই প্রথম আলো পড়তেছিলাম। পত্রিকা পড়তে গিয়ে এই বিজ্ঞাপনটি চোখে ধরল। দুইজন পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো নির্বাচনের জন্য দেশি/বিদেশী পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছেন আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পুনঃবিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাবির পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বলছেন, আবেদনকারী প্রার্থীকে পূরণকৃত আবেদনের সাথে ৩০০০ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইনস্টিউেটের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। 

অদ্ভুত এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞাপনে দেয়া ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম, যে মাসিক ৫০ হাজার টাকায় ছয় থেকে এক বছরের জন্য একটি ফেলোশিপের আবেদন চাওয়া হয়েছিল, গত বছর অক্টোবরে যার আবেদনের সময়সীমা পার হয় ওই বছরেই ১২ নভেম্বর। নির্ধারিত সময়ে যখন দু'জন পিএইচডিধারীকে খুঁজতে পায়নি, তখন তাঁরা পত্রিকায় এই পুনঃবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইনস্টিটিউটের এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি। ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে গিয়ে আবেদনকারীকে যে ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়, এমন উদাহরণ আমার জীবনে এটিই প্রথম। পৃথিবীর অনেক বড় ছোট ফেলোশিপের বিজ্ঞপ্তি দেখার সৌভাগ্য, আবেদন করার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু কখনো এইসব আবেদন করতে গিয়ে আবেদনকারীকেই অর্থ ঢালতে হবে, এমন নজির অন্তত আমি দেখিনি। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষকরাই তো দেশের বাহিরে পিএইচডি/পোস্টডক্ট করতে যান, তাঁদের কি কখনো আবেদন করতে ফি দিতে হয়েছে? বরং পোস্টডক্ট করতে আসা গবেষকদেরই রিলোকেশন ফি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই দেয়। এরপরও পোস্টডক্ট সংকট চলছে। সেখানে আমাদের দেশে উল্টো আবেদনকারীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বাণিজ্যিক মনোভাব বড়ই পীড়াদায়ক।

যেখানে একজন মাস্টার্স পাস করা ছেলে-মেয়ে ভাল মানের একটি চাকরি করলে পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি বেতনে চাকরি পায়, সেখানে একজন পিএইচডিধারী পঞ্চাশ হাজার টাকার ফেলোশিপে আগ্রহী কতটা হবেন? 

হ্যাঁ আমাদের সরকার বা রাষ্ট্র গবেষণামুখী নন। গবেষণায় তাঁরা এখনো সুষম বরাদ্ধ দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা বরাদ্ধে খড়াক্রান্ত। এমন এক পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপ উদ্যেগকেই অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে এমন উদ্ভূত আবেদন ফি' অন্তত অ্যাকাডেমিক গবেষকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং পত্রিকায় যে টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে টাকা খসছে, সেই টাকা ফেলোশিপের মাসিক বেতনে যুক্ত হলে গবেষকরা আরও বেশি উৎসাহী হতেন।

আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এইসব আবেদন ফি'র সংস্কৃতি বন্ধ করবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান বাড়াতে গবেষকদের আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবেন।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান


সর্বশেষ সংবাদ