একাদশে ভর্তি ঢাকায় নাকি মফস্বলে, সরকারি নাকি বেসরকারি কলেজ?
- মোঃ রাকিবুল হাসান তামিম, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০৩:০২ PM , আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০৪:১৫ PM
গত ৩১ মে প্রকাশিত হয় এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। এ বছর প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে সবার উদ্বেগের বিষয় ছিলো একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি প্রক্রিয়া। ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু করার চিন্তা থাকলেও করোনার জন্য সেটিও সম্ভব হয়ে উঠেনি।
সবশেষ করোনা ঝুঁকির মধ্যেই আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমের আবেদন। ৯ আগস্ট শুরু হয়ে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির পুরো ভর্তি প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হবে অনলাইনে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার আবেদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো কলেজ নির্বাচন। এবার অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন ৫ টি এবং সর্বোচ্চ ১০ টি কলেজ পছন্দ করতে পারবে। পছন্দক্রম অনুসারে কলেজ নির্বাচন নিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয় নানা ধরনের শঙ্কা। অনেকেই আবার না বুঝে ইচ্ছেমতো কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখেন যার ফলে ভর্তি নিয়ে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
কলেজ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের শঙ্কা দূরীকরণে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। বিস্তারিত আলাপচারিতার চম্বুক অংশ তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস-এর ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি মোঃ রাকিবুল হাসান তামিম—
কেমন কলেজ পছন্দ করব?
ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন সবারই থাকে। তবে ভালো কলেজ মানে ক্লাসরুম আর পড়াশোনা না। কলেজের একটা নিজস্ব ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ, সহশিক্ষা কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি থাকতে হবে। মেধা এবং মনন প্রকাশের জন্য সামগ্রিক বিবেচনায় পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম যেখানে থাকে সেখানে গেলে পড়াশোনার পাশাপাশি তার মানবিক বিকাশের সহায়ক হয়। শিক্ষার্থীদের সেই সমস্ত কলেজ পছন্দ করা উচিত।
কোথায় পড়ব? ঢাকায় নাকি মফস্বলে?
অনেক সময় পরিবারের উপর শিক্ষার্থীরা চাপ দেয় যে, সে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করবে। মফস্বল এলাকার অনেক অভিভাবকের সামর্থ নেই ঢাকায় রেখে সন্তানকে পড়ালেখা করানোর। শহরে থেকে পড়ালেখা করতে পরিবারের উপর চাপ দেওয়া এবং এই ধরনের মানসিকতা শিক্ষার্থীদের পরিহার করতে হবে। ভালো শিক্ষক দেশের সব জায়গায় আছে এবং ভালো কলেজও আছে। অনেকেই প্রথমে শহরের কলেজে ভর্তি হয় পরে আবার খরচ চালাতে না পেরে বদলি হয়ে গ্রামে চলে যায়৷ তাই এই বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন হয়ে কলেজ পছন্দ করতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতাভিত্তিক নাম্বার খেয়াল রাখতে হবে
কলেজ পছন্দের আগে ওই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নাম্বরে পছন্দকৃত কলেজে ভর্তির সম্ভাবনা আছে কিনা! খোঁজ নেওয়া উচিত। তাহলে শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে না পারলেও সে হতাশ হবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নাম্বারে কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে এমন কলেজ পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখতে হবে।
সরকারি নাকি বেসরকারি কলেজ?
অনেকেই আবার সরকারি বা বেসরকারি কলেজ নিয়ে সন্দিহান থাকে যে কোথায় ভর্তি হবে? অথবা সরকারি কলেজে শিক্ষার মান নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগেন। এক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হবার আগে অবশ্যই নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পারিবারিক অবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে। আর দেশের সকল সরকারি কলেজগুলোতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের তত্বাবধানে পড়াশোনা হচ্ছে। তাই সরকারি কলেজে পড়াশোনার সুষ্ঠ পরিবেশ নিয়ে হতাশ হবারও কিছু নেই।
কলেজ পছন্দ কে করবে? দোকানদার নাকি শিক্ষার্থী?
অনলাইনে আবেদনের সময় অনেক শিক্ষার্থী দোকানদারের পরামর্শ অনুযায়ী কলেজ পছন্দ দেয় এটা কোনোভাবেই উচিত না। শিক্ষার্থীর ফলাফল অনুযায়ী পছন্দের কলেজের তালিকা শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবক মিলে বাসায় বসে ঠিক করা উচিত।
পছন্দের কলেজ নির্ধারণে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে ঐ কলেজ কর্তৃক ভর্তির আবেদনের জন যোগ্যতা নাম্বার কত। অনেকসময় শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে ইচ্ছানুযায়ী কলেজ পছন্দের তালিকায় দিয়ে রাখে যার ফলে শেষ পর্যন্ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই আগেই অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং অভিভাবকদের পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত জেনে কলেজ পছন্দ করতে হবে।
বাসস্থান থেকে দূরের প্রতিষ্ঠান নাকি কাছের?
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা যেখানে সহজেই যাতায়াতের সুযোগ থাকে। এমন যেন না হয়, বাসস্থান থেকে কলেজের দূরত্ব অনেক। প্রতিনিয়ত যাতায়তেই অনেক সময় চলে যায়। এমনটা হলে শিক্ষার্থীর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপের ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সর্বোপরি, বাস্তবিকতার আলোকে চিন্তা করে তাড়াহুড়ো পরিহার করে কলেজ নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।