দুই ইসলামী চিন্তাবিদের ভাবনায় নারী দিবস
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি পালিত হয়। প্রতিপাদ্যগুলোর মূল কথা থাকে নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য, শোষণ ও নিপীড়ন দূর করা। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয় নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আর নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে। বিশ্বের নানা দেশের মতো আমাদের দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বর্তমান সময়ে নারীদের চিন্তা-ভাবনা ও সমসাময়িক ব্যস্ততাসহ নানা প্রসঙ্গে ইসলামের আলোকে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর শরীয়া’হ অনুষদের ডীন ও সাইন্সেস অব হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুল ইসলাম—
ড. মোহাম্মাদ শাফী উদ্দীন মাদানী, ডীন, শরীয়া’হ অনুষদ
নব্য জাহেলিয়াতের নারীদের পণ্যসামগ্রী বানিয়ে ব্যাবহার, ১৪’শ বছর আগে মহানবী (স.) জাহেলিয়াতের নারীদের অবমূল্যায়ন, অসন্মানজনক অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে মানবতার কাতারে সমানভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার যে মহান দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর কাঁধে অর্পন করে গিয়েছেন তার আলোকে আমরা দেখছি যে নারীরা সমাজে খুবই সন্মানিত এবং সমাজের সমান অংশে তারা কাজ করছেন। কিন্তু নারীদেরকে তাদের সম্মানের জায়গা থেকে অসম্মানের জায়গায় নিয়ে যাওয়া, পণ্য হিসাবে ব্যাবহার, বাণিজ্যিক কাজে তাদের ভোগ-বিলাসে পরিণত করা এসব কিছুতে তাদের অসম্মান করা হচ্ছে। তাই বলবো এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন দিবসে তাদের সম্মান দেয়া নয়। তাদের সম্মান সব সময় সর্বাবস্থায় তাদেরকে ইসলাম সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
যেমন বিশ্বনবী নারীদের মা হিসাবে কন্যা হিসাবে স্ত্রী হিসাবে সমাজের সদস্য হিসাবে সম্মান দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নিসার ১৯নং আয়াতের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, সেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা পুরুষেরা নারীদের সাথে সদাচরণ করবে অসৌজন্যমূলক আচরণ করবে না আবার পরক্ষণের একজন পুরুষকে বলেছেন- তুমি কখনও শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমার স্ত্রী শ্রেষ্ঠতার সাক্ষী না দেয়’। অপরদিকে রাসূল (স) এর একটি বাণী দিয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ওই ব্যাক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তখন রাসূল বলেন আমি আমার পরিবার স্ত্রীর কাছে শ্রেষ্ঠ। আর আজ নারীর প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন, মারধর, আহত করে আর অন্য দিকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দেয় এ জাতীয় শ্লোগান দিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর তাই নতুন করে বিদাত সৃষ্টি ইসলাম কখনও সাপোর্ট করবে না, যে নারীকে সম্মানের জন্য কোন একটা দিবসের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলা হচ্ছে। শুধু ওই দিবসেই তার সম্মান করা হবে, তার খোঁজ-খবর নেয়া হবে আনুষ্ঠানিকতা করা হবে এটা নয়, বরং নারীদের জন্য বছরের সবদিনই যপমন পুরুষদের জন্য সম্মান প্রতিপত্তি স্বীকৃতির তেমনিভাবে নারীদের জন্যও সেই অধিকার ইসলাম দিয়ে দিয়েছে।
আমরা দেখি ইসলাম নারীদের অধিকার সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেমন শিক্ষা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে। সমাজে তাদের সদস্য হিসাবে নিজের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার দিয়েছে। তবে সবকিছু করতে হলে ইসলামের মধ্যে থেকে শরীয়ত সম্মত পন্থায় সবকিছু সে করতে পারবে। আর যদি শরীয়ত সম্মত পন্থায় তারা তাদের কাজগুলো করে তাহলে বর্তমান সমাজে যেনা-ব্যাভিচারসহ অশ্লীল কেন কার্যকলাপ দেখব না। আমরা দেখি আমাদের দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী স্পীকার, সংসদে নারী সংরক্ষিত আসন এরপরেও বর্তমানে নারীদের অধিকার ঠিকমতো আদায় করে দিতে পারছি না। তাই বলবো শরীয়ত সম্মত পন্থায় নারীরা তাদের কার্যক্রম চালালে আমরা সহজেই সমাজের এই অসঙ্গতি থেকে তাদের মুক্তি পাবে।
ড. মোহাম্মাদ নাজমূল হক নদভী, চেয়ারম্যান, সাইন্সেস অফ হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ
ইসলামের পূর্ব যুগে নারীদের অবস্থা কি ছিল? আমরা যদি এ প্রশ্ন করি তাহলে তারা নানা অসঙ্গতি, হয়রানি, লাঞ্ছনার স্বীকার হতে দেখেছি। আর ইসলাম আসার পর তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে, তাদের শারীরিক সক্ষমতা, শারীরিক পরিধি বিবেচনা করে কিছুটা সীমারেখা দেয়া হয়েছে, সেটাকে বিবেচনা করেই বর্তমান তারা যেগুলো থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে সেটা আদায়ে তারা চেষ্টা করবে।
তিনি পবিত্র কোরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, নারীদের উপার্জনে অধিকার রয়েছে, তবে সেটা শরীয়ত সম্মত পন্থায় হতে হবে। আর যদি মানব সমাজের কথা চিন্তা করি তাহলে নারী এবং পুরুষ একে অপরের হাত ধরে সমাজটা এগিয়ে যায় তাই শুধু পুরুষ-পুরুষ দ্বারা সমাজ পরিচালিত হয় না। তেমনিভাবে নারী নরীদের নিয়েও হবে না, দুটোর সমন্বয় করেই একটা সুন্দর-সুশীল সমাজ গঠিত হয়। আর যুগে যুগে নারীরা সমাজ বিনির্মানে অবদান রেখেছে।
যেমন আল্লাহর রাসূল (স.) এর স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.) তার সকল সম্পদ রাসূলকে (স.) ঢেলে দিয়েছেন। যেমন আরবদের মধ্যে কথা আছে ওই পুরুষই সৌভাগ্যবান যে তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিত সহযোগীতা পায়। এ জন্যই অনেক মনিষীরা মনে করেন, যত পুরুষ আছে তাদের সফলতার পেছনে কোন না কোন নারী থাকে। তাই নারীর পরামর্শ-সহযোগিতা ছাড়া কোন পুরুষ এগিয়ে যেতে পারে না। তবে ইসলামের সীমারেখা অতিক্রম না করলেই হবে।