টানাপোড়েনে আব্বা একবার ঈদে নতুন জামা দেয়নি, যেটা আমাকে সংযম শিখিয়েছিলো

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আজাদ খান। তিনি জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা মাউশির দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা কাজে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মাউশিকে দুর্নীতি মুক্ত করতে এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্কুল-কলেজের দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী সংস্থাটির সর্বোচ্চ এ কর্তা ব্যক্তি সম্প্রতি ঈদ স্মৃতি নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্মরণ করেছেন ছোটবেলার ঈদের মধুর স্মৃতিগুলো। মাউশি মহাপরিচালকের ঈদ স্মৃতির সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশটুকু নিচে তুলে ধরা হলো-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ছোট বেলার ঈদ স্মৃতি নিয়ে কিছু বলুন।
অধ্যাপক ড. আজাদ খান: ঈদুল ফিতরের আগে রোজা রাখা এবং নামাজ পড়াটা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ঈদের নামাজে আব্বা, চাচা, চাচাতো ভাইদের সাথে ঈদগাহে যাওয়া হতো। আব্বা সাধারণত ফিতরা দিতেন ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর। যাকে দিবেন তিনি তার বাড়িতে চলে যেতেন। চাল বা গম ফিতরা হিসেবে দেয়া আব্বার রীতি ছিল। এগুলো মনে পড়ে এবং অনুসরণ করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদের দিন সকাল থেকে বিকেলে কীভাবে পার করতেন? বিশেষ কিছু করতেন কি?
অধ্যাপক ড. আজাদ খান: ঈদের দিন আমাদের বাড়িতে বিশেষ বিষয় ছিল... মা সারাক্ষণ রান্না ঘরেই থাকতেন। কাজে সহায়তা করতেন ‘‘হাছেনের মা বুজি’’। শৈশবে আজমত ভাই নামাজ শেষে তার বাড়িতে আমাদের বেড়াতে নিয়ে যেতেন। আমাদের ভাইবোন সবাইকে দাদা-দাদি সম্বোধন করতেন। ঈদের দিন সমবয়সী গ্রামের ছেলেরা রাস্তায় মার্বেল খেলতো। সেখানে আমার অংশগ্রহণ ভীষণ নিরুৎসাহিত করতেন আব্বা। এটা আমার সে বয়সের কষ্টের অনুভূতি। মার্বেল খেললে হাত নোংরা হয়- এটা আব্বার প্রবল যুক্তি। গ্রামের ছেলেরা সিনেমা দেখতে যেতো; যেখানে আমার যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত সিনেমা হলে ঢুকি নি। গ্রামে এবং পাশের গ্রামের ‘‘ভাল-ছাত্র টাইপের’’ কিছু বন্ধু ছিল— বিকালটা তাদের সাথেই কাটতো। ঈদের দিনও গ্রামের যারা খাবার সংগ্রহ করতে পারতো না তাদের কষ্টের কথা এখনও মনে পড়ে। নূরু চাচা, জব্বার ভাই, সামাদ পাগলা— এরা কি করুণ আবদার নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতো সেগুলো দেখে খুবই কষ্ট লাগতো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতি ঈদে নতুন জামা কেনা হত? ঈদ মার্কেট নিয়ে কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
অধ্যাপক ড. আজাদ খান: খুবই সাধারণ মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে আব্বার সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের সাত ভাইবোনকে ঈদে কাপড়চোপড় কিনে দিতেন আব্বা। সাংসারিক টানাপোড়েন আর আব্বার সংযমী আচরণের কারণে এক ঈদে আমার নতুন জামা কেনা হয়নি। সেটা আজও পর্যন্ত কাউকে না বললেও সংযম ও সততার শিক্ষাটা গ্রহণ করেছিলাম শৈশবেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান সময়ের ঈদ আর আগের ঈদের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেন কি?
অধ্যাপক ড. আজাদ খান: মানুষের সচ্ছলতার কারণে ঈদ উৎসবে পরিণত হলেও সহানুভূতি সংযম সহমর্মিতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ভাটা পড়েছে এখনকার ঈদে। নানা মাত্রায় অধর্মীয় উপাদান ধর্মীয় উৎসবে অনুপ্রবেশ করেছে, যেগুলো খুবই অগ্রহণযোগ্য। পার্থক্য বলতে এতটুকুই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ
অধ্যাপক ড. আজাদ খান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।