একসঙ্গে এইচএসসির প্রস্তুতি-বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ

সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী
সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী  © টিডিসি ফটো

সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী। শৈশবের শুরুতে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণ হয়নি ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায়। তবে তাতে থেমে যাননি স্বপ্নবাজ এ তরুণী। ভালো কোনো বিদ্যালয়ে না পড়তে পারার আক্ষেপ থাকলেও তিনি পিছিয়ে থাকেননি সহশিক্ষামূলক নানা প্রতিযোগিতায়। ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী’হওয়ার গৌরবের পাশাপাশি কৃতী এ শিক্ষার্থীর রয়েছে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের ১২৩টি পুরস্কার। সম্প্রতি তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকার বিখ্যাত লিবারেল আর্টস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় চার কোটি টাকা সমমূল্যের বৃত্তি নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে। তার সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন মাহতাব আজমাঈন রিয়াদ। সম্পাদনা করেছেন খাঁন মুহাম্মদ মামুন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব-কৈশোর এবং বেড়ে ওঠার গল্প দিয়েই শুরু করতে চাই।
সাদিয়া ইয়াসমিন: আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলায়। শৈশব অনেক ধরা বাঁধা নিয়মের মধ্যেই কেটেছে। বাইরের মানুষের সাথে মেশা হয়ে ওঠেনি। স্কুলের দিনগুলো খুব একটা রঙিন ছিল না। সামাজিকতা, মানুষের সাথে কথা বলা—এসব শিখেছি টেলিভিশন দেখে। তবে স্কুলের সব অ্যাক্টিভিটিসের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করার চেষ্টা করেছি ছোটবেলা থেকে। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে আমি প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার স্কুল-কলেজের সময়টা কেমন ছিল?
সাদিয়া ইয়াসমিন: আমি প্রাইমারিতে পড়েছি কাহালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছোটবেলা থেকেই আমি পাইলট হতে চেয়েছিলাম। সেজন্য আমি ক্যাডেট কোচিং করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ক্যাডেট কলেজে চান্স পাইনি। এরপর বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেখানেও সুযোগ হয়নি। এরপর আমি বাবার স্কুল কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। ওখান থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি ২০২০ সালে। এসএসসির পর করোনার কারণে আমার সেশন দেরি হয় এবং আমি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। সেখান থেকে ২০২২ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বিশ্ববিদ্যালয় ডাকছে আজিজুল হক কলেজের সাদিয়াকে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল?
সাদিয়া ইয়াসমিন: শুরুতে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন না থাকায় আমার এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন একসাথে করতে হয়েছে। আমি আমার পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎকারসহ যাবতীয় কাজ একসাথেই করেছি। এরপর থেকে আমার পরিবারও আমাকে সমর্থন দিতে শুরু করে। আমার এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে আগস্ট থেকে নভেম্বরে চলে আসে, এইচএসসি শুরু হয় নভেম্বরের ৬ তারিখে, আমি আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়েছিলাম নভেম্বরের এক তারিখে। আমি সবকিছুই এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই করেছি।

আমার এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালে সুইট বেয়ার কলেজের ফলাফল পেয়েছিলাম। তবে আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করছিলাম সেখান থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার পর আমি অনেকটা হতাশায় পড়ি। আমি ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম এবং আমেরিকার ১৩টি থেকে সম্পূর্ণ স্কলারশিপসহ ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। প্রথম কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে আমি স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে সুযোগ পেয়েছি। সাধারণ শিক্ষাক্রমে পড়ে এ অর্জন আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও নিয়মিত অংশগ্রহণ কীভাবে সম্ভব হয়েছে? 
সাদিয়া ইয়াসমিন: আমি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছিলাম এবং সবগুলোতেই ট্যালেন্টপুলসহ বৃত্তি পেয়েছিলাম। এছাড়াও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯২ শতাংশ নম্বর নিয়ে জিপিএ: ৫ পেয়েছিলাম।

‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলাম। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে আমি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে ৩য় হয়েছিলাম— এটি ছিল আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা। এরপর আমি উপজেলা, জেলা, বিভাগ থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করি। আমি বেশ কয়েকবার বগুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছিলাম।’’

প্রয়োজনীয় নথি: যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল, সহশিক্ষা কার্যক্রমের বর্ণনা, অর্জন, স্যাট পরীক্ষার স্কোর, আইইএলটিএস/ডুয়োলিঙ্গের স্কোর, রচনা, লেটার অব রিকমেন্ডেশন, স্কুল রিপোর্ট এবং ফিন্যান্সিয়াল কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ কিশোর কিশোরী প্রতিযোগিতায় আমি জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর আমি পিকেএসএফ’র ন্যাশনাল দূত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কবিতার পাশাপাশি আমি নাচও করেছি, আবার গানও করেছি। সাথে নাটক ও করেছি। এসবেও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমি জেলাতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছি ৫বার, বিভাগে ২বার। ম্যাথ অলিম্পিয়াড, বায়োলজি অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে আমি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছি। এ বছর আমি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অনারেবল মেনশন পেয়েছি বাংলাদেশের হয়ে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড, কমনওয়েলথ ইয়ং লিডার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এর বাইরে আমার আরও বিভিন্ন অর্জন রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের প্রক্রিয়া: কমন অ্যাপে পছন্দমতো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে আবেদন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় সেই আবেদনের ওপর বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে কমন অ্যাপ ছাড়াও স্কোইর (Scoir) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও আবেদন করা যায়। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন পোর্টাল থাকে আবেদন করার জন্য। আবেদনের সাথে অ্যাপ্লিকেশন ফি ওয়েভার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লিকেশনে কোনো খরচ লাগে না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন এবং অনুপ্রেরণা কী ছিল? 
সাদিয়া ইয়াসমিন: শুরুতে বাংলাদেশের অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো আমারও বাংলাদেশেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছিল। এরপর আমার কলেজ থেকে একজন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তখন আমার চেষ্টা করার বিষয়টি মাথায় আসে। আমি বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করেছি এবং অগ্রজরা এক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেছে। আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি, চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
সাদিয়া ইয়াসমিন: শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল লিবারেল আর্টস কলেজগুলো। কারণ আমার গবেষণা এবং পিএইচডির ইচ্ছে রয়েছে। আমার এইচএসসি পরবর্তী সময়গুলো কাজে লাগাতে অনেকগুলো গবেষণার সাথে যুক্ত হই। এটি আমাকে সহায়তা করে এবং এর সাথে সংযুক্তির ভিত্তিতে আমি ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি। সবগুলো বিষয় মেনে আবেদন করাটা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের পরিচিতি এবং অর্জন, আর্থিক অবস্থান এবং সংশ্লিষ্ট সবকিছুই নিয়ে বুঝেশুনে কাজ করলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফুলরাইড স্কলার হিসেবে স্ক্রিপস কলেজ আপনাকে কী কী সুবিধা দেবে?
সাদিয়া ইয়াসমিন: আমি যে বৃত্তিটা পেয়েছি তার পরিমাণ হলো প্রতিবছর প্রায় ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। আমার থাকা-খাওয়া, ব্যক্তিগত খরচ সবকিছু এই স্কলারশিপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। এছাড়া সেখানে আমার প্রথম সেমিস্টার থেকেই বিভিন্ন গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া স্ক্রিপ্স কলেজের একটা নিজস্ব রিসার্চ সেন্টার আছে। আমার মূল যে লক্ষ্যটা ছিল, পিএইচডি এবং গবেষণায় সুযোগ পাওয়া। এর বাইরে গবেষণায় আলাদা বরাদ্দ এবং ইন্টার্নশিপ আছে। এছাড়া আমাদের লিডারশিপ সেন্টার রয়েছে; সেখানে বৈশ্বিক নানা ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাদিয়া ইয়াসমিন: স্ক্রিপ্সের অনেক ভালো হেলথ সায়েন্স গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আমাদের যিনি অধ্যাপক তিনি একজন নোবেল বিজয়ী এবং আমাদের ক্লেয়ারমন্ট কনসোর্টিয়ামের মধ্যে প্রায় ১৮ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। আমি তাদের সাথে কাজ করতে চাই। আমি পিএইচডিতে করতে চাই এবং আমি স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কখন শুরু করা উচিত এবং কী কী করা উচিত?
সাদিয়া ইয়াসমিন: আমেরিকায় ভর্তির বিষয়ে আমার পরামর্শ হলো— যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা যায়। আমার মনে হয়, অষ্টম-নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। কারণ এটি কোনো একটা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে হয় না, সামগ্রিক একটা প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মান, অর্জন অনেক কিছুই বিবেচনা করা হয়। শুধুমাত্র ফলাফল এখানে মুখ্য না। প্রথমেই তারা একজন খুব ভালো মানুষ চায়, তারা একজন নেতা চায়, এগুলো গড়ে তুলতে এবং নিজেকে প্রস্তুত করতে অনেক সময় প্রয়োজন। ব্যক্তিত্ব, সামাজিক দায়িত্বশীলতা, মেধা এগুলো ভর্তির জন্য একটা বড় অংশ।

এজন্য যে যত আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবে সে তত এগিয়ে থাকবে। যেহেতু এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সেজন্য হতাশ হওয়া যাবে না। হেরে যাওয়া যাবে না। অনেক বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে। অনেক আবেদন বাতিল হবে; এটি সাধারণ বিষয়। যারা আবেদন করবে তাদের জন্য আমার পরামর্শ—নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো, নিজেকে জানো এবং লেগে থাকো। অনেক বড় কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মতো যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান, কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবে?
সাদিয়া ইয়াসমিন: প্রথমত আমার জানা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে আইইএলটিএস পরীক্ষা দিবেন। ৬.৫+ স্কোর, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ বা ভালো জিপিএ পাবেন। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে প্রতিবছর ২৫ লাখ (১০+/-) টাকার মতো খরচ হবে এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন। যদিও আমার মতো বেশির ভাগের পরিবারের পক্ষে এই অর্থ দেয়ার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু যাদের আছে তারা চাইলেই বাইরে পড়তে যেতে পারেন।

আর আপনি যদি আমেরিকাতে যেতে চান তাহলে স্যাট এক্সামে একটু ভালো স্কোর আসলে (1300+ out of 1600) আরও বেশি স্কলারশিপ পাবেন। কিন্তু মাথায় রাখবেন স্যাট আপনার একাডেমিক যোগ্যতার একটি হলেও আইইএলটিএস শুধুমাত্র আপনার ইংরেজিতে দক্ষতা আছে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালগুলোর পড়াশোনা আপনি ভাষাগতভাবে বুঝার যোগ্যতা রাখেন সেটির সার্টিফিকেট বলতে পারেন।

একটি ইংলিশ স্পিকিং দেশে একটা বাচ্চাও যেখানে ইংরেজিতে কথা বলে সেখানে আপনার ইংরেজির যোগ্যতা দেখে ইমপ্রেসড হয়ে আপনাকে স্কলারশিপ দিবে তা কখনো ভাববেন না। আর হ্যাঁ! যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় দেয় তাদের থেকে আপনি প্রথমত খুব বেশি স্কলারশিপ পাবেন না আর তাদের গুনগত মান নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্টও হতে পারবেন না। স্যাটে ১৪৬০+ স্কোর করলে সেটি আপনাকে অবশ্যই আমেরিকাতে ভালো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Texas at Arlington, Florida International University, University of South Florida etc.) ৮০% থেকে ১০০% টিউশন স্কলারশিপও দিবে যদি আপনার এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫.০ পেয়ে থাকেন আর আপনি আপনার স্কুলের টপ ৫% স্টুডেন্টদের একজন হন।

স্যাট এক্সামে আপনি চাইলে আমেরিকার ভর্তি পরীক্ষা বলতে পারেন যেখানে আপনাকে ইংলিশের রিডিং ও রাইটিং সেকশনে ৮০০ মার্ক এবং ম্যাথের সেকশনে ৮০০ মার্কের উপর মোট ১৬০০ মার্কের একটি পরীক্ষা দিতে হবে। স্যাট প্রস্তুতি নিতে পারেন Khan Academy SAT এই ওয়েবসাইটে। এখানে বিনামূল্যে সবাই স্যাটের প্রস্তুতি নিতে পারে আর প্রস্তুতির বইগুলো পাবেন এই লিংকে গিয়ে। স্যাটে ম্যাথ সেকশনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সহজে ভালো নম্বর পেলেও ইংলিশ সেকশনে নম্বর তোলা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। ভালো করতে সিয়াম ভাইয়ার ভিডিও দেখতে পারেন, লিংকে দেয়া বইগুলো শেষ করতে পারেন এবং খান অ্যাকাডেমিতে বেশি বেশি প্র্যাকটিস করতে পারেন!

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফুল স্কলারশিপ পেতে হলে শুধু স্যাটে ভালো করলে, আইইএলটিএসে ৭+ পেলে অথবা এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলে কিছুই হবে না। কারণ প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাপ্লাই করে স্যাট 1500+ এবং আইইএলটিএস ৮+ স্কোর নিয়ে আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব কম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেক ফিনান্সিয়াল এইড দিয়ে নির্বাচন করে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের গুরুত্ব কতখানি?
সাদিয়া ইয়াসমিন: কেউ তাদের নিজস্ব দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কম্পিটিশন করে পুরস্কার অর্জন করে। অনেকে অনেক সুন্দর আর্ট পারে এবং সেই আর্ট দিয়ে সমাজকে স্থিরচিত্রে তুলে ধরতে পারে ভিন্নভাবে। কেউবা আবার তার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হাজারো পথশিশুর পড়াশোনার ব্যবস্থা করছে। কেউ হয়তো Infectious Disease নিয়ে গবেষণা করে। সবাই সবার মতো নিজেদের ভালোলাগার কাজগুলো দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনছে অথবা তার বিশেষ বিষয়ের দক্ষতা পরবর্তীতে যুগান্তকারী কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে- এসব কিছুই Extra Curricular Activity (ECA)। তাদের SAT বা IELTS এ ভালো মার্কস তো থাকেই এবং তাদের ECA, Common App Essay-তে থাকে অনন্য ব্যক্তিত্বের ছাপ। 

আপনি তাহলে কি করবেন? যা আপনার করতে ভালো লাগে! তত্ত্বীয় বিষয়ে ভালো হলে অথবা কোন বিশেষ বিষয়ে ভালো হলে সেই বিষয়ের অলিম্পিয়াডে যোগদান করতে পারেন অথবা খুব ভালো আঁকতে বা গান জানলে আপনার শিল্প  দিয়ে তুলে ধরতে পারেন সমাজের চরম বৈষম্য। তারা আপনার ফলাফলের বাইরের আপনি মানুষতাকে দেখবে আপনার কাজ, অর্জন এবং আপনার Essay দিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পেতে আপনাকে রকেট সায়েন্স জানতে হয়তো হবে না কিন্তু অনন্য কেউ হতে হবে আপনার কাজ বা সফলতা দিয়ে। না হয় কোনো প্রতিষ্ঠান কেন আপনার পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে চাইবে যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পড়তে চাওয়া শিক্ষার্থীর কোনো অভাব নেই তাদের। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো “Holistic Review” করে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে এবং পড়াশোনার বাইরের প্রতিটি কাজকে অনেক গুরুত্ব দেয় যদি তা তার সমাজের মানুষকে কোনোভাবে প্রভাবিত বা উপকার করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ