দেশে চাকরির সুযোগ তৈরি হলে কানাডা থেকে ফিরে আসবো

মাহির কামাল
মাহির কামাল  © টিডিসি ফটো

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বিজনেস এন্ড টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহির কামাল। বর্তমানে তিনি কানাডার টপ বিজনেস স্কুল আইভি বিজনেস স্কুল থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস এনালিটিক্সে অধ্যয়ন করছেন। সম্প্রতি তিনি তার এই যাত্রার নানা দিক নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গল্প শুনতে চাই।
মাহির কামাল: এইচএসসির পরপর আমার ইচ্ছা ছিল বিজনেস নিয়ে পড়াশোনা করার। তাই আমি বিজনেস স্কুলে এডমিশন দিয়েছিলাম। পাশাপাশি আইইউটিতেও পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এর মাঝে আমার আইইউটি নিয়ে একটি পজিটিভ পারস্পেক্টিভ থাকায় আমি আইইউটিতে ভর্তি হয়ে যাই। ২০১৭ সালে আইইউটিতে প্রথম বিজনেস ডিপার্টমেন্ট চালু করা হয়। আর আমিও এই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়েছিলাম।

এখানে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যাত্রা শুরু করি। আমার এই ডিপার্টমেন্টটার কোর্স-কারিকুলাম অনেক ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। কারণ এখানে শুধু বিজনেস না, টেকনোলজিও ব্লেন্ডেড ছিল। আমার মনে হয়েছিল, এখানে যদি আমি পড়ালেখা করি তাহলে আমার আউটকামস আরো বেটার হবে। এসব চিন্তা করেই আমার আইইউটিতে ভর্তি হওয়া।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জন্য আইইউটির বিটিএম ডিপার্টমেন্ট কেমন ছিল?
মাহির কামাল: আমার ইউনিভার্সিটির অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলোর তুলনায় নিজের ডিপার্টমেন্ট বিটিএমের টিচারদের অনেক সাপোর্টিভ মনে হয়েছে। আমি নিজেকে অনেক ফরচুনেট বলবো। কারণ আমার যখনই কোনো হেল্প প্রয়োজন হয়েছে, তখনই ডিপার্টমেন্ট আমাকে সহায়তা করেছে। বিভাগরে সব শিক্ষক অনেক সাপোর্টিভ ছিলেন।

আমি আমার অন্যান্য বন্ধুদের কাছে শুনতাম, তাদের ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টে অনেক সমস্যা। কিন্তু আমি যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছি, আমার ডিপার্টমেন্ট আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শুনেছি আপনি কানাডার আইভি বিজনেস স্কুলে বর্তমানে পড়াশুনা করছেন। এখানে ভর্তির গল্পটা শুনতে চাই।
মাহির কামাল: কানাডা আমার কখনই টার্গেট ছিল না। আমার টার্গেট সবসময় ছিল আমেরিকাকে ঘিরে। কারণ আমি আমেরিকাতে গিয়েছিলাম। সে সুবাধে আমার আমেরিকা সম্পর্কে ভালোই ধারণা ছিল। আর কানাডায় এখন যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি, শুধুমাত্র এখানেই আবেদন করেছিলাম। তবে এর আগে আমার যতগুলো ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করা হয়েছে, তার ৯৫ শতাংশই গৃহীত হয়েছিল।

May be an image of 1 person, suit, newsroom and text that says "WESTERN"

কানাডাতে আসার আমার মূল কারণ ছিল, এখানে আমার পড়ার খরচটা তুলনামূলক কম পড়বে। আর কানাডার ইউনিভার্সিটিতে আমার মাস্টার্সের ডিউরেশন মাত্র ১৬ মাসের। দিনশেষে যদি আমার কানাডা সেভাবে ভালো নাও লাগে, তাহলে আমার এখান থেকে আমেরিকায় শিফট করার সুযোগ আছে। কারণ দুটিই পাশাপাশি দেশ। আর দুইটা দেশের কালচার অলমোস্ট একইরকম। 

প্রিপারেশনের ব্যাপারটা আসলে অনেক দীর্ঘ। কারণ বাইরে পড়তে যেতে হলে অনেক এফোর্ট দিতে হয়। অনেক সময় দেওয়া লাগে। আমি টানা দুই মাস ধরে সব ইউনিভার্সিটি রিসার্চ করেছি—কোন কোন বিজনেস স্কুলগুলো ভালো, সেটা খুঁজে পেতে। আমি সেগুলোর র‍্যাঙ্কড করেছি। আমার কখনোই জিআরই/জিম্যাট দেওয়ার প্ল্যান ছিল না। আমার মনে হয়েছিল এগুলো দেওয়া আমার সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আমি পার্সোনালি কনফিডেন্ট ছিলাম, জিআরই/জিম্যাট ছাড়াই আমরা প্রোফাইল যথেষ্ট ছিল। সে কারণে আমি এসব ছাড়াই এগিয়ে যাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইভি বিজনেস স্কুলে চান্স পাওয়ার জন্য জিআরই/জিম্যাট/আইএলটিএসের মধ্যে কোনটি বেস্ট অপশন হবে?
মাহির কামাল: আইভি বিজনেস স্কুলে আমি জিআরই/জিম্যাট ছাড়াই আবেদন সাবমিট করেছিলাম। তারা আমার আবেদন দেখে আমাকে ওয়েভার দিয়েছে। জিআরই/জিম্যাটের মধ্যে কোনটা দিলে ভালো হবে বা কোনটার ভ্যালু বেশি? এ বিষয়ে আমি বলবো যে এটা আসলে একজন ইন্ডিভিজুয়ালের উপর নির্ভর করবে। তার শক্তি কোথায় সেটা তাকে নির্ধারণ করতে হবে।

যেমন কেউ যদি মনে করেন যে তিনি জিম্যাটের প্রশ্নের ধরন বা অন্যান্য জিনিসগুলো নিয়ে বেশি কমফোর্টেবল, তাহলে তিনি জিম্যাট দিতে পারেন। আর যদি তিনি মনে করেন জিআরই-এর প্রশ্নের ধরন বা পড়া নিয়ে তিনি বেশি কমফোর্টেবল, তাহলে তিনি জিআরই দিতে পারেন। কিন্তু আমার পার্সোনাল রিকমন্ডেশন থাকবে, যদি বিজনেস স্কুলই টার্গেট থাকে তাহলে জিম্যাটটা দেওয়ার জন্য।

কারণ জিম্যাটের প্রেফারেন্সটা আমি এ কারণে দিয়েছি, আইভি বিজনেস স্কুল জিআরই-এর চেয়ে জিম্যাটের স্কোরটা বেশি অগ্রাধিকার দেয়। জিম্যাটের প্রিপারেশনটা অনেকটা আপনাকে ব্যবসায়িক স্কুলে এবং আপনার পেশাগত কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো বিকাশ করতে সহায়তা করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিদেশের বিজনেস স্কুলগুলোতে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কি?
মাহির কামাল: সাধারণত টপ বিজনেস স্কুলগুলো কম স্কলারশিপ দেয়। কানাডার বিজনেস স্কুলগুলোতে স্কলারশিপ পাওয়ার চান্স অনেক কম। তবে আমেরিকায় এই অপরচুনিটিটা তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই স্কলারশিপ যদি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমি রিকমেন্ড করবো আমেরিকাতে যাওয়ার জন্য। কারণ কানাডায় এই জিনিসটা একটু লিমিটেড।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইভি বিজনেস স্কুলে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পাওয়া বা স্কলারশিপ ছাড়া পড়াশোনার খরচ কেমন?
মাহির কামাল: স্কলারশিপ ছাড়া পড়তে গেলে খরচটা অনেক বেশি পড়বে। আইভি বিজনেস স্কুলকে ক্যানাডার মোস্ট এক্সপেন্সিভ বিজনেস স্কুল বলা হয়। কিন্তু দিনশেষে টপ বিজনেস স্কুলগুলোতে পড়ার ইচ্ছাই প্রধান্য পাবে। তাই এটা একজন ইন্ডিভিজুয়ালের উপর ডিপেন্ড করবে, তিনি খরচের দিকটা কীভাবে দেখছেন। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে অনেক খরচের ব্যাপার রয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় যাওয়ার পর আপনি কী কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, এগুলো কীভাবে মোকাবিল করছেন?
মাহির কামাল: ব্যাপারটা হচ্ছে শুধু কানাডা না, যেকোনো দেশে নতুন গেলে বিভিন্নরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে হবে। কারণ আপনি এখন আপনার নির্দিষ্ট-পরিচিত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আপনার কাছে সবকিছুই নতুন মনে হবে।

তাই দেখা যাবে অনেক এডজাস্টমেন্ট করতে হয় লাইফে। অনেক কিছু কনসিডার করা লাগে। সবকিছু মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ আসলে অনেক বেশি। তবে এসব পরিস্থিতিতে আপনাকে খুবই স্মার্ট হতে হবে। কারণ এখানে স্মার্টনেস অনেক ম্যাটার করে। যেমন আপনি কীভাবে মানুষজনের সাথে ডিল করছেন এ ব্যাপারগুলো। প্রত্যেকটা দিনে অনেক অনিশ্চয়তা থাকবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে পার্টটাইম জব নিয়ে কিছু বলুন।
মাহির কামাল: কানাডায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করে একজন শিক্ষার্থী নিজের থাকার ব্যয়টা হয়তো ম্যানেজড করতে পারবে। এখানে লিভিং এক্সপেন্স বলতে যেটা বোঝাচ্ছি সেটা হলো, বাসা ভাড়া আর থাকা-খাওয়ার খরচ।

তবে কেউ যদি চিন্তা করে পার্টটাইম জব করে সে তার টিউশন ফি দিতে পারবে, এটা আসলে ভুল। এখানে আপনি যদি পড়াশোনা না করে সপ্তাহে ৬০-৭০ ঘণ্টা জব করেন তাহলে হয়তো টিউশন ফিও ম্যানেজড করতে পারবেন।

তবে এটাতে লাভ কি হচ্ছে? আপনি তো ইউনিভার্সিটিকে টাকাই দিয়ে যাচ্ছেন শুধু, পড়ালেখা হচ্ছে কই? তাই আল্টিমেটলি ওইটা কোন লাভ হয় না। এজন্য আমি বলবো, পার্টটাইম জব করে টিউশন ফি ম্যানেজড করার ব্যাপারটা মাথা থেকে বাদ দিতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কানাডায় আইইউটি শিক্ষার্থীদের বেশ বড় একটি কমিউনিটি রয়েছে বলে শুনেছি। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।
মাহির কামাল: কানাডায় আইইউটির কমিউনিটিটা অনেক বড়। শুধু কানাডাতেই না, আমেরিকাতেও আইইউটির বড় কমিউনিটি রয়েছে। এখান থেকে যদি একটি পজেটিভ দিকের কথা বলি, তাহলে  বলব অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের কথা। এ অ্যালামনাই নেটওয়ার্কটা অনেক বিস্তৃত এবং শক্তিশালী।

May be an image of 1 person

যে কেউ যদি কোনো একটি কান্ট্রি বা একটি পার্টিকুলার সিটিতে যায়, তাহলে দেখা যাবে সে একজন আইইউটিয়ান পাবেই। ওইভাবে কানাডাতে আইইউটির নেটওয়ার্কটা খুবই স্ট্রং। আমি যদি আমার কথা বলি, আমি কানাডাতে ল্যান্ড করেছি আগস্টের ২৫ তারিখে। পরে আগস্টের ২৬ তারিখেই এ কমিউনিটির একটা পিকনিক ছিল। এভাবে এ কমিউনিটি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মাহির কামাল: ভবিষ্যৎটা খুবই অনিশ্চিত। তবে এখন যদি আমি বলি, তাহলে আমার টেক ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টারেস্ট আছে। সেখানে বিজনেস এনালিস্ট অথবা প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করতে চাই। তাই আপাতত ওইটাই প্ল্যান। তবে বাকি কয়েক বছরের জন্য আমি কানাডাতেই থাকতে হচ্ছে। পরে বাংলাদেশেও ব্যাক করতে পারি। সেখানে যদি চাকরির ভালো সুযোগ তৈরি হয় তাহলে আমি সেটাই করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণ প্রজন্মের কাছে আপনার বার্তা কি থাকবে?
মাহির কামাল: আমি যতটুকু এক্সপেরিয়েন্স করেছি, সেটার বেসিসে আমি বলব ‘জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিন্তা করে নেওয়া উচিত’। কেউ একজন একদিকে গেছে, তাই আমাকেও সেদিকে যেতে হবে—এমনটি ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ আপনি যদি দেখেন, কেউ বিদেশে যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে আপনারও তাই করা উচিত। সেখানে যদি আপনি ভালো করার সম্ভাবনা দেখেন তবেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ