পরিশ্রম-অধ্যবসায়ই বিসিএস যুদ্ধ জয়ের একমাত্র হাতিয়ার

 শেখর কুমার রায়
শেখর কুমার রায়  © টিডিসি ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থী শেখর কুমার রায়। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং তার আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
 
পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমূলা গ্রামে বেড়ে উঠা শেখর কুমার রায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে শুনিয়েছেন বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, অনুজদের প্রতি তার পরামর্শ ও সফলতার গল্প। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফ হোসাইন—


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করলেন?

শেখর কুমার রায়: প্রথমেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আমি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকমূলক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবে যুক্ত থাকার ফলে, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা শুরু হয় ৫ম সেমিস্টারে। তারপরই মনে হলো, কিছু একটা করা দরকার, সেই ভাবনা থেকেই মূলত বিসিএস নিয়ে লেগে থাকা। তখন বিভিন্ন সংগঠনের কাজ, ক্লাস, পরীক্ষা ও ব্যস্ত সময় থাকা সত্ত্বেও বিসিএস নিয়ে সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনা শুরু করি।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, ভাইভা ও রিটেন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বলুন?

শেখর কুমার রায়: আমার কাছে মনে হয়, বিসিএস প্রিলি পাশ করা যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই সহজ রিটেন পাশ করা। তাই প্রিলির প্রতি আলাদা একটা ভীতি সবসময় কাজ করতো। প্রিলি পাশের জন্য আমাদের একটু স্মার্টলি পড়াশোনা করতে হবে। আমি মনে করি, বিগত সালের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে, নিজের দুর্বলতা এনালাইসিস করে প্রিলি পরীক্ষার জন্য নিজেকে শাণিত করতে হবে। এখানে সমুদ্রের মতো সিলেবাস মনে হলেও, একটু বুঝে পড়তে পারলে সহজেই এই কঠিন ধাপ উর্ত্তীণ হওয়া যায়।

আর বিসিএস লিখিত এর ক্ষেত্রে, বাংলা এবং ইংরেজিতে গ্রামাটিক্যাল নিয়ম মেনে সুন্দর লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। সর্বোপরি, লিখিত পরীক্ষায় মানসিকভাবে শক্ত হয়ে, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করি। ভাইভা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। বিসিএসসহ প্রায় ৭/৮টি সরকারি ভাইভায় মুখোমুখি হয়েছি, একেকটায় একেক রকম অভিজ্ঞতা। তবে ভাইভায় নিজেকে ভয়ডরহীন রাখাটা জরুরি, আর এটা রাখার জন্য নিজ জেলা, বিভাগ, নিজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুক্ত আর নিজ সাবজেক্ট নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখা দরকার। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন কোনো অভিজ্ঞতা আছে যা আপনাকে সফল হতে প্রেরণা দিয়েছিল?

শেখর কুমার রায়: এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে,  কিছু একটা করতে হবে, নিজের ও নিজ পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কিছু করতে হবে। এরকম চিন্তা থেকেই পড়াশোনা নিয়ে লেগে থাকতাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস:  স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো স্মৃতি আছে কী?

শেখর কুমার রায়: অনেক স্মৃতি আছে। স্কুল জীবনে বন্ধুদের সাথে দুষ্টমি মিস করি। সব থেকে বেশি মিস করি আমার গণিতের শিক্ষক তৈয়ব স্যারকে। একবার এক বিষয়ে পরীক্ষা ভালো হলেও মার্ক কম পেয়েছিলাম, কষ্ট নিয়ে স্যারকে যখন বলেছি, স্যার উত্তরটা দিলো এভাবে, “স্কুলের পরীক্ষায় কম পেলে কিছু হয়না, এসএসসি পরীক্ষায় তোকে আটকাতে পারবে না” কথাটা আজও মনে পড়ে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দিন আমার জন্য শিক্ষণীয়, আমার শিক্ষক, বন্ধুমহল, সর্বোপরি আমি যেসব সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম, সেসব সংগঠনের সহকর্মীরা। সবাই আমার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে জ্ঞানের মন্দির। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

শেখর কুমার রায়: পরিবারকে নিয়ে সুখী জীবন যাপন করা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ কী থাকবে?

শেখর কুমার রায়: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিসন্দেহে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চাকরিগুলো দিয়ে থাকে। তবে, বিভিন্ন কারণে এর দীর্ঘসূত্রিতা থেকেই গেছে। অনুজদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, এটার জন্য তোমাকে লেগে থাকতে হবে। ক্যাডার হবার জন্য তোমাকে মেধাবী না হলেও চলবে, তবে তোমাকে অধ্যবসায়ী হতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখতে হবে, হতাশ হওয়া যাবে না।

আর যারা নেগেটিভিটি ছড়ায়, তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। পজিটিভ মানুষ, পড়ার শক্তি দ্বিগুণ করে দেয়, তাই যত পারা যায়, বিসিএস নিয়ে ভাবে এমন মানুষের সান্নিধ্যে থাকতে হবে, প্রয়োজন হলে কোচিং এর পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আর বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এলোমেলোভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে, সিলেবাস বুঝে, অধ্যায়ভিত্তিক পড়াশোনা করা যেতে পারে। সিলেবাসটা আয়ত্ত্বে থাকলে, আমার মনে হয়, বিসিএস ভীতি একটু হলেও কমে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ