ঈদে বাবা-মাকে ভীষণ মনে পড়ে

  © টিডিসি ছবি

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। সময়ের পরিবর্তনে এই ঈদকে ঘিরেও থাকে সুখ-দুঃখের নানা স্মৃতি। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে নিজের ঈদ স্মৃতি তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য সচিব ড. ফেরদৌস জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছোটবেলার ঈদের আয়োজন কেমন হত?

ড. ফেরদৌস জামান: বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় আমরা বিভিন্ন জেলা শহরে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু প্রতি ঈদেই আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেতাম। ঈদে সবচেয়ে বড় আগ্রহ থাকতো গ্রামের বাড়িতে ফেরা নিয়ে। সব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একসাথে ঈদ উদযাপন করতাম। সে এক অন্যরকম আনন্দ ছিল। আমরা অপেক্ষায় থাকতাম কবে গ্রামের বাড়িতে যাবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছোটবেলার ড. ফেরদৌস জামান: ঈদের দিনটা কিভাবে কাটতো?

ড. ফেরদৌস জামান: ঈদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় থাকতো নতুন জামা। অনেক যত্নে সেই জামা আলমারি বা ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখতাম যাতে কেউ না দেখে। কারণ তখন ধারণা ছিল কেউ জামা দেখে ফেললেই পুরানো হয়ে যাবে। ঈদের দিন সকালে নতুন জামা পড়ে বাবা-ভাইদের সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। ঈদের নামাজ শেষে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি আগ্রহ থাকতো সালামি নিয়ে। সেই সময়ে সালামির পরিমাণ হয়ত খুব বেশি ছিল না কিন্তু নতুন টাকার সেই সালামিই মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সালামির টাকা সাধারণত কিভাবে ব্যয় করতেন

ড. ফেরদৌস জামান: চাচাতো-ফুফাতো ভাই-বোনরা মিলে চড়ুইভাতির আয়োজন করতাম। আবার অনেকসময় দেখা যেত বাবা-চাচারা গরীব মানুষদের সহযোগিতা করছেন আমরাও তাদের দেখাদেখি সালামির টাকা দান করে দিতাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখনকার ঈদ কিভাবে কাটে?

ড. ফেরদৌস জামান: এখন সাধারণত এক ঈদ বাড়িতে এবং আরেক ঈদ ঢাকায় উদযাপন করা হয়। এখনকার ঈদও আনন্দের তবে তখনকার মত ততটা জৌলুশপূর্ণও নয়। ছোটবেলার সাথে এখনকার ঈদের বড় পার্থক্য ছোটবেলায় বাবা-চাচাদের কাঁধে দায়িত্ব ছিল আর এখন নিজের কাঁধেই দায়িত্ব। এখন আমিই সালামি দেই, উপহার দেই। যদিও উপহার এখনও পাই। স্ত্রী উপহার দেয়, কাছের আত্মীয়, স্বজনসহ অনেকে উপহার দেয়। সবমিলিয়ে এখনকার ঈদও আনন্দময়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন পর্যন্ত ড. ফেরদৌস জামান:ঈদের স্মরণীয় স্মৃতি কি?

ড. ফেরদৌস জামান: ঈদের স্মরণীয় যে স্মৃতি সেটা আনন্দময় নয় বরং বরং উৎকণ্ঠার স্মৃতি। সেবার ঈদেও আমরা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম৷ বাবা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল৷ আমি ভাই-বোনদের সাথে খেলায় ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ আমার মা এসে বললেন আমার দুই বছরের ছোট ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাৎক্ষনিক সবাই খুঁজত শুরু করে। একপর্যায়ে দেখা যায় আমাদের বাড়ির পেছনের পুকুরে ছোট ভাই হাবুডুবু খাচ্ছে। সাথে সাথেই উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। আমার ভাই সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। তবে যে উৎকণ্ঠার মাঝে আমরা সে সময়টা পার করেছিলাম তা আজও মনে পড়ে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদে কোন বিষয়টা সবচেয়ে মিস করেন?

ড. ফেরদৌস জামান: ঈদে সবচেয়ে বেশি মিস করি বাবা-মাকে। একসময় বাবার সাথে নামাজে যেতাম, বাবা-মা ভাই-বোনদের সাথে আনন্দপূর্ণ ঈদ উদযাপন করতাম৷ কিন্তু আমি যখন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বাবা মারা গেছেন, করতামারা গেছেন তিন বছর হল৷ বড় ভাইও মারা গিয়েছেন কয়েকবছর আগে৷ তাদের জন্য খুব বড় শূন্যতা অনুভব করি৷ যখন বাড়িতে যাই বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করি তখন মনে হয় তাদের ছাড়া পুরো পৃথিবীই শূন্য।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেয়ার জন্য। ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।

ড. ফেরদৌস জামান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস পরিবারকেও ঈদের শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ