স্মার্টফোন থাকলেও ‘আসক্তি’ তৈরি হয়নি ভর্তি পরীক্ষায় চমক দেখানো বুশরার

আমিনা বুশরা
আমিনা বুশরা  © টিডিসি ছবি

এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চমক দেখিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আমিনা বুশরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটের মেধা তালিকায় তিনি যথাক্রমে ৩য়, ৯৪তম এবং ৪০তম স্থান অর্জন করেন। সেইসঙ্গে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মানবিকের ‘বি’ ইউনিটে ৮০তম স্থান অর্জনের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটের মেধা তালিকায় ১ম, ৬৮তম এবং ২য় স্থান অর্জন করেছেন তিনি।

ভর্তি প্রস্তুতি ও অ্যাডমিশন সময়ের বিভিন্ন গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার এই ছাত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নাঈম—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন ছিল?
আমিনা বুশরা: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আল্লাহর রহমতে ভালো ছিল। না হলে তো এতকিছু সম্ভব ছিল না। পড়াশোনা করতে হয়েছে ভালোই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার পর থেকে নাকি আরও আগে থেকে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলেন?
আমিনা বুশরা: আলিম/এইচএসসির প্রথম থেকেই মোটামুটি শুরু করেছিলাম প্রস্তুত। বিশেষ করে জিকে (সাধারণ জ্ঞান)। তাছাড়া বাংলা-ইংরেজির বেসিক ভালো থাকায় আলাদা করে তেমন পড়তে হয়নি। অ্যাডমিশনের সময়ে বাংলা ইংরেজির প্রস্তুতি পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে জিকে আগে থেকে পড়ে রাখায় অনেক উপকার হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাবি-গুচ্ছের পর এবার জাবিতে চমক তা’মীরুল মিল্লাতের বুশরার

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যবই কি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক ছিল?
আমিনা বুশরা: মাধ্যমিকের বই আসলে তেমন লাগে না। তবে জাবি (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষার জন্য মাধ্যমিকের অংক কাজে লেগেছে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা ইংরেজি তো অবশ্যই কাজে লেগেছে। ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবই থেকে আলাদাভাবে প্রশ্ন হয়, সেক্ষেত্রে এটা গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে থাকাকালীন পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আউট বই কেমন পড়তেন?
আমিনা বুশরা: আউট বই বলতে গল্পের বই পড়া হতো ভালোই। তবে নতুনদের জন্য পরামর্শ থাকবে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ হেডলাইন দেখে পত্রিকা পড়া।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করতেন?
আমিনা বুশরা: টাইম ম্যানেজমেন্ট এর মূল বিষয় হচ্ছে সময় ভাগ করে নেওয়া, যেমন বাংলা, ইংরেজি, জিকে ইত্যাদি আলাদা সময় নিয়ে দাগানো। তবে ঢাবির জন্য বিশেষ করে রিটেনে অনেক প্র‍্যাক্টিস করতে হবে। না হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট বুঝে ওঠা যাবেনা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন, কোথায় এবং কোন বিভাগে ভর্তি হবেন?
আমিনা বুশরা: কোথায় ভর্তি হব এ ব্যাপারে আসলে এখনো চিন্তা করতেছি। সব পেয়ে আসলে দ্বিধায় পরে গেছি। ভর্তি হলে ‘আইন’ নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

“মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে থাকার বড় একটা কারণ ইংরেজিতে দুর্বলতা। দেখা যায় প্রতিযোগীতামূলক পরিক্ষায় ইংরেজির কারণে হাজার হাজার স্টুডেন্ট ঝরে পরে। এখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো তাদের ইংরেজি বিষয়ে ভালো মানের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।”

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভবিষ্যতে কি হতে চান? কোন পেশায় যুক্ত হতে চান?
আমিনা বুশরা: ভবিষ্যতে আলাদা করে কী হব সেটা আলাদা করে ভাবা হয়নি, হালাল পথে থেকে আল্লাহ যেটা কবুল করেন সে পথেই যাব, তবে আদর্শ মানুষ হতে চাই।

আরও পড়ুন: বুয়েটে প্রথম, আইইউটিতে ১৪তম, ঢাবিতে ১০৩তম, মেডিকেলে ২৪৩তম শাফিন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অবসর সময় কিভাবে কাটান?
আমিনা বুশরা: অ্যাডমিশন জার্নিতে অবসর সময় বলতে কিছু ছিল না। তবে সাধারণত ছবি আঁকা-আঁকি, গল্পের বই পড়া, বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজ করে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। সবার তাই করা উচিত বলে আমার মনে হয়, একসাথে আনন্দ আর সময়টা কাজে লাগানো দুটোই হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এডমিশনের সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে থাকে, আপনিও কি তাই করতেন?
আমিনা বুশরা: হ্যাঁ, আমিও তাই করতাম। মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাইতাম এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম।

“আলাদা ফোন ব্যবহার করতাম, কিন্তু রেস্ট্রিকশন (সীমাবদ্ধতা) ছিল বাবা-মায়ের। যার ফলে নির্দিষ্ট ব্যবহার ছিল। এ কারণে আসক্তি বা অন্যান্য নেগেটিভ বিষয়গুলো ফেস করতে হয়নি। তবে সবার প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলা। কারণ আমার বাবা-মা আমাকে যেভাবে গার্ড দিয়েছেন সেভাবে সবার বাবা-মা দিতে পারেন না। ফলে অনেক স্টুডেন্ট আসক্তি থেকে শুরু করে মারাত্মক নেতিবাচক বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পরে। এটা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে।”

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্যোশাল মিডিয়া/স্মার্টফোন কেমন ইউজ করতেন? স্যোশাল মিডিয়া/স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্যারিয়ারে (প্রস্তুতি) সমস্যা হয়। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? স্যোশাল মিডিয়া/স্মার্টফোন ব্যবহারে পরামর্শ-
আমিনা বুশরা: হ্যাঁ, সোশাল মিডিয়া ব্যাবহার করতাম। তবে আমার আইডিতে বিভিন্ন শিক্ষণীয় পেজ ফলো করা ছিল। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত ফোন ছিল না, পড়াশোনার প্রয়োজনে রাখিনি। আলাদা ফোন ব্যবহার করতাম, কিন্তু রেস্ট্রিকশন (সীমাবদ্ধতা) ছিল বাবা-মায়ের। যার ফলে নির্দিষ্ট ব্যবহার ছিল। এ কারণে আসক্তি বা অন্যান্য নেগেটিভ বিষয়গুলো ফেস করতে হয়নি। তবে সবার প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলা। 

কারণ আমার বাবা-মা আমাকে যেভাবে গার্ড দিয়েছেন সেভাবে সবার বাবা-মা দিতে পারেন না। ফলে অনেক স্টুডেন্ট আসক্তি থেকে শুরু করে মারাত্মক নেতিবাচক বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পরে। এটা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমারই সাথে পড়েছে, মেধাবী স্টুডেন্ট কিন্তু এই ফোনের প্রতি আসক্তি বা ব্যবহারে নির্দিষ্টতা না থাকায় এই অ্যাডমিশন সময়টা কাজে লাগাতে পারেনি। এখন তার জন্য আফসোস করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এই ব্যর্থতার দায় বেশিরভাগ মানুষকে তার সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

তাছাড়া কেউ যদি মনে করে যে শিক্ষণীয় কাজে সোশাল মিডিয়া কাজে লাগাবো, সেটাও দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়না, আমি নিজেই এটা দেখেছি, কোনো কাজে ফেসবুকে গিয়ে দেখি আধা ঘন্টা কিভাবে যেন নষ্ট হয়ে গেছে, তাই বিশেষ করে ভর্তিযুদ্ধে এটা সর্বোচ্চ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বলা হয়ে থাকে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকেন অনেক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়? সেটা কেন, আর এটা কাটাতে কি পরামর্শ থাকবে? 
আমিনা বুশরা: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে থাকার বড় একটা কারণ ইংরেজিতে দুর্বলতা। দেখা যায় প্রতিযোগীতামূলক পরিক্ষায় ইংরেজির কারণে হাজার হাজার স্টুডেন্ট ঝরে পরে। এখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো তাদের ইংরেজি বিষয়ে ভালো মানের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। তাছাড়া কেউ ইচ্ছে করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নিজে নিজেই ইংরেজির বেসিক ভালো করার চেষ্টা করতে পারে, এটা ভবিষ্যতে তাদের জন্য উপকারী হবে।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেলেন এক মাদ্রাসার অর্ধশত শিক্ষার্থী

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আগামী দিনের ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কি পরামর্শ থাকবে?
আমিনা বুশরা: আগামীতে যারা ভর্তি হবে তাদের জন্য পরামর্শ হলো– নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। এখন থেকেই পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হয়। বিশেষ করে জিকে (সাধারণ জ্ঞান), ভবিষ্যতে যারা ক্লাস করবে কিংবা অন্যান্য জায়গায় পড়বে তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের উপর ভরসা রেখে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। বেশি বেশি দোয়া করে রহমতের প্রত্যাশী হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভকামনা।
আমিনা বুশরা: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ