সিজিপিএ নয়, আত্মবিশ্বাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মামুন
বিসিএসের মতোই পছন্দের চাকরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদ। তরুণদের অন্যতম পছন্দের চাকরি এটি। একাডেমিক ফলে যারা এগিয়ে থাকেন চাকরির প্রতিযোগিতা তাদের জন্য কিছুটা সহজ হয়ে যায়। তবে তুলনামূলক খারাপ ফল দিয়েও দিয়ে চাকরির পরীক্ষায় টেকা যায় কিংবা এডির মতো চাকরি নিশ্চিত করা যায়, যেন সেটিই প্রমাণ করে দেখালেন মো. মামুন।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২২৫ প্রার্থীকে সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে গত মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মেধাতালিকায় ১৬৪তম হয়েছেন মো. মামুন। স্নাতকে ২.৭৯ সিজিপিএ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির চাকরি পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তার শিক্ষাজীবন ও কম সিজিপিএ নিয়ে চাকরির প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখী হয়েছে। তার কথাগুলো শুনেছেন আফরিন সুলতানা শোভা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্নাতকে কম সিজিপিএর কারণ কি ছিল?
মো. মামুন: স্নাতকে কম জিপিএ থাকার প্রধান কারণ ছিল পারিবারিক সমস্যা। ফার্স্ট ইয়ারে এডমিশনের পর থেকেই আমি আসলে টিউশন করে চলেছি। আমাদের ইউনিভার্সিটি খরচটা অনেক বেশি ছিল। প্রতি তিন টার্মে একটি ইয়ার কমপ্লিট হয়। প্রতি টার্ম শেষে ৩৫০০ টাকায় ভর্তি হতে হয়। বছরে ১২,০০০ টাকার মত ভর্তির খরচ হত।
পাশাপাশি আরও অনেক ম্যাটেরিয়ালস লাগতো; যা আমার জন্য তখন পাহাড় সমান বাধা ছিল। ফলে আমি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। তার উপরে প্রতি টার্ম সমাপ্ত হয় তিন মাসে। ২১ দিন পর শুরু হয় মিড টার্ম, তার দুই সপ্তাহ পরে ২য় মিড টার্ম এবং তার ৪ সপ্তাহ পর শুরু হয় ফাইনাল পরীক্ষা। সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস, এরপরে টিউশনি করিয়ে আমি আসলে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না।
যার ফলে আমার রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়। কিন্তু নেক্সট টার্মগুলো থেকে আমি আরও বেশি পরিশ্রম শুরু করি। কিন্তু রেজাল্ট আর বাড়াতে পারিনি।
যাদের জিপিএ কম তাদের প্রতি আমার পরামর্শ একটাই, নিজের প্রতি কনফিডেন্স রাখুন। যা হয়ে উঠেনি তা নিয়ে মন খারাপ করলে হতাশায় ডুবে যাবেন। চাকরির পরীক্ষাগুলো জিপিএ কেন্দ্রিক না। রুটিন করে পড়াশোনা করুন, ভালো লিখিত দিতে পারলে যে কোন চাকরি আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চাকরির পড়াশোনা কবে থেকে শুরু করা উচিত? আপনি কখন থেকে শুরু করেছিলেন?
মো. মামুন: চাকরির পড়াশোনা চতুর্থ বর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু করা উচিৎ। এর আগের সময়টাতে একাডেমিক পড়াশোনা করে নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রং রাখা জরুরি। জিপিএ কম থাকলে সেটা হতাশার জন্ম দিতে পারে। পাশাপাশি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো কম জিপিএ দেখলে নেগেটিভ ধারণা পোষণ করতে পারে।
চেষ্টা করতে হবে জিপিএটা যেন একদম ডাউন না হয়ে যায়। চতুর্থ বর্ষ থেকে ধীরে ধীরে গণিত, ইংরেজির বেসিক ব্যাপারগুলো ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে হবে। ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। পত্রিকা পড়লে নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হবে। সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা শুধু মুখস্থ নির্ভর পড়লে মনে থাকবে না। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ থেকে এগুলো শিখার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
পত্রিকাতে বিভিন্ন ঘটনাগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডটা ক্লিয়ার করা থাকে। ফলে এগুলো শিখতে ভালো লাগে। পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা চাইলে কেউ আরও আগে থেকে করতে পারে।
পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়ার অভ্যাস করা যায়। আমি সেকেন্ড ইয়ার থেকে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তাম। বই পড়তে আমার ভালো লাগতো। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, চার্লস ডিফেন্স, শেলি, কিটস, উইলিয়াম সমারসেট ইত্যাদি লেখকদের সাহিত্য পড়তাম। শেক্সপিয়ার পড়েছি থার্ড ইয়ারে এসে।
আরও পড়ুন: এক ক্লিকে দেখুন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পদ ১৭৫১টি
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্নাতকে কম সিজিপিএ নিয়ে চাকরির প্রস্তুতিতে কোন প্রভাব ছিল?
মো. মামুন: স্নাতকের কম জিপিএ আমার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন রুপ প্রভাব ফেলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পাওয়ার আগেও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে জেনারেল অফিসার পদে চাকরি পেয়েছিলাম। যদিও সেখানে যোগদান করিনি।
পাশাপাশি আমি ৪১তম বিসিএসে ভাইভা দিয়েছি। ভাইভাতে জিপিএ নিয়ে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও অংশ গ্রহণ করেছি। এছাড়াও এনএসআই এডি, ২টি অডিটর পদেও ভাইভা দিয়েছিলাম। কোথাও আমাকে জিপিএ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়নি। জিপিএ কোন বাধা নয়, যদি নিজের প্রতি কনফিডেন্স থাকে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যাদের কম সিজিপিএ তাদের উদ্দেশ্যে চাকরির জন্য কি পরামর্শ থাকবে?
মো. মামুন: যাদের জিপিএ কম তাদের প্রতি আমার পরামর্শ একটাই, নিজের প্রতি কনফিডেন্স রাখুন। যা হয়ে উঠেনি তা নিয়ে মন খারাপ করলে হতাশায় ডুবে যাবেন। চাকরির পরীক্ষাগুলো জিপিএ কেন্দ্রিক না। রুটিন করে পড়াশোনা করুন, ভালো লিখিত দিতে পারলে যে কোন চাকরি আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবেন, তারা কেমন প্রস্তুতি নিলে ভালো হয়?
মো. মামুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক সব থেকে প্রতিযোগিতামূলক চাকরিগুলোর মধ্যে একটি। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে ফ্রী হ্যান্ড রাইটিংয়ে দক্ষ হতে হবে। গণিতের নম্বর অনেক কমে এসেছে। পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান যুক্ত হয়েছে। বাংলা এবং ইংরেজি রচনায় (ফোকাস নামে পরিচিত) প্রায় ৭০ নম্বর এবং আরগুমেন্টে ৩০। মোট ১০০ নম্বর।
এই ১০০ নম্বর চাকরি পাওয়ার দৌড়ে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। এই জন্য নিয়মিত ইংরেজি এবং বাংলা পত্রিকা পড়ার কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত পত্রিকার ইডিটোরিয়াল, বিজনেস এবং প্রথম পাতা নোট করে পড়তে হবে। সম-সাময়িক সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যাবে সেগুলোর উপরে নোট করতে হবে।
গণিত নবম দশমের বোর্ড বইয়ের ম্যাথ ইংরেজি ভার্সনে সমাধান করলেই যথেষ্ট। সাধারণ জ্ঞান মূলত বিসিএসে আসা প্রিভিয়াস প্রশ্নগুলো দেখলেই কভার হয়ে যাবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ইস্যুগুলোও জানা থাকতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন একটি বিশেষায়িত বিষয়, সেখানে স্নাতক পড়ে ব্যাংকে ক্যারিয়ার কেন চয়েজ করলেন?
মো. মামুন: সত্যি কথা বলতে গেলে আমি আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করব এমন স্বপ্নই কখনো দেখিনি। আমি বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা করেছি। আমার বিসিএসের প্রিপারেশন থেকেই আসলে ব্যাংকের চাকরিগুলো হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
মো. মামুন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো।