ভর্তির পরও ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের ১৩ লাখ আসন

কলেজের শিক্ষার্থী
কলেজের শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চার ধাপে শিক্ষার্থী নির্বাচনের পর দেশের কলেজগুলোয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ১৩ লাখ আসন ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। চলতি বছর বিভিন্ন কলেজ-মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন ছিল ২৬ লাখের বেশি। কিন্তু এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক ও আলিম পর্যায়ের এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাঁকা থাকছে ১৩ লাখ আসন। 

গত এক দশকে দেশে বেশ কিছু কলেজ পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি পেয়েছে। এমপিওভুক্ত হয়েছে বেশ কিছু কলেজ। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আসন অনুমোদন পাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বিবেচনায় এমপিওভুক্তি, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও একাদশ শ্রেণির মোট আসন সংখ্যার পার্থক্য এতটা বেশি। 

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চার ধাপে শিক্ষার্থীদের আবেদন নিয়ে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরপর কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেন সে তথ্য আমাদের কাছে আসবে।

আরও পড়ুন : একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময়সীমা আবারও বাড়ল

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চলতি বছর আমাদের কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে ২৬ লাখের কিছু বেশি আসন আছে। ফলে বহু আসন ফাঁকা থেকে গেছে। তবে জনপ্রিয় ও মানসম্মত কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা নেই। মফস্বল অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো আসন সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী পায়নি। প্রতিবছরই কলেজগুলোতে কয়েকলাখ আসন ফাঁকা থেকে যায়। 

ঢাকা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৬ লাখ ৭২ হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ হলেও তাদের মধ্যে ১৩ লাখের কিছু বেশি শিক্ষার্থী চার ধাপে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। অর্থাৎ তারা কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাচ্ছেন। বাকিদের অনেকেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় চলা বিভিন্ন ডিপ্লোমা ও এইচএসসি বিএম-ভোকেশনাল কোর্সে ভর্তি হয়েছেন, ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাদশে ভর্তির জন্য আবেদন করা প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ৬ হাজার শিক্ষার্থী এখনও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হননি।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজগুলোতে পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি দেয়ার কর্মকাণ্ড তদারকি করেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর কলেজ পরিদর্শকরা। কেন প্রতিবছর লাখ লাখ আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে? দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রিজাউল হক বলেন, এগুলোর মধ্যে বেশকিছু কলেজ রাজনৈতিক বিবেচনায় পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। পরে একই বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অবস্থান বিবেচনায়, আশপাশে কলেজ না থাকায় পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। আবার মানবিক বিবেচনায়ও অনুমতি পেয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে অতিরিক্ত আসনের বিষয়টি তুলে ধরব। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় শিক্ষার্থী না পাওয়া বা কম শিক্ষার্থী পাওয়া কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। 

যদিও বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতি বছর একাদশে ভর্তির পর লাখ লাখ আসন ফাঁকা থাকে। ভর্তির মৌসুমে কোন কোন গণমাধ্যম বিষয়টি সামনে আনে। তখন বোর্ডের কর্তারা জানান তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হল সে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থী না থাকলে এমপিও বাবদ অপচয় হয় সরকারি কোটি কোটি টাকা। যে টাকার মালিক জনগণ। 

‘ঠিক যেমন প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে শূন্য পাস বা কেউ পাস করতে না পারা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। শূন্য পাস করা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করেই ক্ষ্যান্ত হয়ে যায় শিক্ষা প্রশাসন। এসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ হওয়ার খবর আর পাওয়া যায় না’, যোগ করেন তিনি। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮০৭টি স্কুল, কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে গত বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমপিওভুক্তির উপহার দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১১টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ২৩টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ছিল। 

আরও পড়ুন : রাজনৈতিক বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হচ্ছে ৯১ প্রতিষ্ঠান

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত হওয়া ৯১টি প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ না করলেও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের মার্চে মন্ত্রী ও এমপিদের ডিও লেটারের (বেসরকারি পত্র) পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য সারসংক্ষেপ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়।

এর কিছুদিন পর হঠাৎ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্বাচনী আসনে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর সরকারের উচ্চমহলের চাপে ওই ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্তির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ