ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের চেয়ার নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৪৩ AM , আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৪ AM
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সম্প্রতি শূন্য হয়েছে কলেজটির অধ্যক্ষের পদ। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নিয়ে যুদ্ধ। কলেজটির জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হাসিনা বেগম এবং দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কেকা রায় চৌধুরীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে দু’টি পক্ষ।
ইতোমধ্যে একটি পক্ষ অপর পক্ষের সদস্যদের বাদেই সভা করে শিক্ষক কেকা রায় চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছে। আর এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেছেন জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হাসিনা বেগমসহ গভর্নিং বডির সদস্যরা।
জানা যায়, গত ১ এপ্রিল পরিচালনা পর্ষদের ‘বিতর্কিত’ এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কেকা রায় চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৫ এপ্রিল জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানিয়ে ১৫ শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিতভাবে আবেদন জানান ।
শিক্ষক প্রতিনিধি চাঁদ সুলতানা বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। একই দাবি জানিয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর আবেদন করেছেন গভর্নিং বডির পাঁচ সদস্যও।
গভর্নিং বডির সদস্য সিদ্দিকী নাদির উদ্দিন বলেন, বিগত প্রিন্সিপালের সময় তিনিসহ কয়েকজন মিলে অসংখ্য দুর্নীতি করেছেন। ৬৯ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৮৯ লাখ টাকা বিল করেছেন। আর তাদের এসব দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে তারা জ্যেষ্ঠতা বিধি ভেঙে তাদের পক্ষের একজনকে নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের গভর্নিং বডির পাঁচজনকে কোনো কিছু না জানিয়ে নিজেদের মত সবকিছু কেরে কেকা চৌধুরীকে নিয়োগ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের সব ধরনের দুর্নীতির প্রমাণও রয়েছে আমাদের কাছে। আমরা কোনো অন্যায়ের সঙ্গে নেই। আমরা তাদের এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছি। গভর্নিং বডির সভাপতির নিকট এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কেকা রায় চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হাসিনা বেগম আমার সিনিয়র কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামালা চলমান থাকায় আমাকে গভর্নিং বডির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষ আমায় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। চেয়ারম্যানও আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেছেন।
অনিয়মের অভিযোগ এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের বাদ দিয়ে সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা পারলে আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ করুক। সভা নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। হাইকোর্ট সিদ্দিকী নাদির উদ্দিন এবং তাজুল ইসলামের সদস্যপদ স্থগিত করায় তারা এখন আর গভর্নিং বডির সদস্য নন। তবে মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং চাঁদ সুলতানা কেন উপস্থিত ছিলেন না জানা নেই।
তবে সভার বিষয়ে কিছু জানতেন না দাবি করে মো. আব্দুর রাজ্জাক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কোনো সভা হবে এমন কিছু আমাকে জানানো হয়নি। আর আমি যতদূর শুনেছি সিদ্দিকী নাদির উদ্দিন এবং তাজুল ইসলামের সদস্যপদ স্থগিতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বের হয়ে আসছে নানা দুর্নীতির তথ্য। একাধিক সূত্র দাবি করেছে, পরিচালনা পর্ষদের একাংশ ৬৯ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন করেছে। এছাড়া, সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার প্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন যার কোনো হিসাব দেননি। এমনকি অবসরে যাওয়ার আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় ৮৯ লাখ টাকার বিভিন্ন কেনাকাটার বিল অবৈধভাবে পাস করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন। শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে কোনো জটিলতা থাকলে মাউশি অধিদপ্তর বা শিক্ষা বোর্ড তা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের দর্শন বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক কামরুন নাহার মুকুলকে প্রেষণে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি রাজধানীর দুয়ারীপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কামরুন নাহারকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
এর আগে সম্প্রতি কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির অযোগ্য ঘোষিত শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খানমের দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সই করা এক চিঠিতে ২৮ মার্চ এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।