বিএসএমএমইউতে ফের চালু হচ্ছে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)  © ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মুসলেহ উদ্দীন বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা দূর করতে এবং রোগীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আগামী ১ মার্চ থেকে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল পরিদর্শন করলে হাসপাতালের পরিচালক এ তথ্য জানান।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নানা অব্যবস্থাপনা। শিশু নেফ্রোলজি বিভাগে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল ফ্লোরে শুয়ে আছেন কয়েকজন রোগী, যাদের প্রত্যেকের চোখে আক্ষেপের  ছাপ। তাদের মধ্যে এক ১৩ বছর বয়সী শিশু শিফরান, যাকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে তার পরিবার নিয়ে এসেছে। তার পিতা শহিদ (৪৫) জানালেন, ‘আমরা ১১ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি। আমাদের মেয়ের সমস্যার জন্য, এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি।’

শিফরানের মা শরীফা আক্তার (৪০) বলেন, ‘আমাদের মেয়ের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। তার জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা এবং খাওয়ার সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তবে এখন কিছুটা সুস্থ আছে।

তিনি আরও জানান, ‘এখানে চিকিৎসা অনেক ভালো পাচ্ছি। ডাক্তাররা যথাসময়ে এসে আমাদের সন্তানকে দেখছেন, টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে খরচ কিছুটা বেশি।’ তিনি যোগ করেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় এখানে খরচ কম হলেও, এটি এখনও অনেক বেশি।’

বিএসএমএমইউ-র গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ইয়াসমিন(২৩), যিনি শ্যমলী থেকে পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি ১২ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। তবে তিনি বলেন, তার সমস্যার সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়নি।

ইয়াসমিন জানান, ‘খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয় না, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং বমি হয়। আমি এখনও জানি না আমার রোগটা কী, তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আসার পর ডাক্তাররা কিছু রিপোর্ট দিয়েছেন, কিন্তু তারা রিপোর্টগুলো সঠিকভাবে দেখেন না। এবং রোগী কেন এসেছে, কী তার চাওয়া—এই বিষয়গুলোর সাথে খুব বেশি আলোচনা হয় না।’ তিনি আশা করেন, চিকিৎসকরা একটু বেশি সময় দিয়ে রোগীদের সাথে আলোচনা করুক। যাতে রোগীরা আরও ভালোভাবে তাদের চিকিৎসার সম্পর্কে জানতে পারেন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মুসলেহ উদ্দীন জানান, স্বায়ত্তশাসিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে চিকিৎসার খরচ কিছুটা কম। ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবার জন্য বেড দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ বেড সংখ্যা নির্ধারিত। সাধারণত নির্ধারিত সংখ্যার তিন গুণ রোগী এখানে আসে, যার ফলে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমরা নির্দিষ্ট একটি তারিখ দিয়ে রোগীদের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

ডাক্তারদের অবহেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাজারো রোগীর চাপে কিছু ডাক্তারদের মধ্যে এমনটা হতে পারে, তবে আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাতে ডাক্তার, নার্স ও ক্লিনাররা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে। অনেক সময় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকার কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়, আর সেই সুযোগটাই নেয় দালাল চক্র। তারা রোগীদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বিভ্রান্ত করে, ফলে হাসপাতালের দুর্নাম হয়।’

উল্লেখ্য, এর আগে বিএসএমএমইউতে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালু হয়েছিল। তবে সেটা তত কার্যকর না হওয়ায় এবার নতুন করে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!