গ্রীষ্মের সেরা পানীয় ডাবের পানির উপকারিতা ও সতর্কতা

ডাবের পানি
ডাবের পানি  © সংগৃহীত

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে, তখন দ্রুত প্রশান্তি এনে দিতে পারে ডাবের পানি। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি পানীয়, যাতে কোনো কৃত্রিম রং, প্রিজারভেটিভ বা ফ্লেভার থাকে না। বাজারের অন্যান্য কৃত্রিম পানীয়ের তুলনায় ডাবের পানি বেশি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী। মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ডাবের পানির স্বাদ বিভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ডাবের পানি সাধারণত বেশি মিষ্টি, বাংলাদেশের ডাবের পানি হালকা নোনতা-মিষ্টি, আর কিছু দেশের ডাবের পানি তুলনামূলকভাবে পানসে স্বাদের হয়।

ডাবের পানি নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে ১৮ ক্যালরি, ৪ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২০৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২.৬ মিলিগ্রাম সুগার, ২.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই খনিজ উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ডাবের পানি তাৎক্ষণিকভাবে শরীরকে শীতল করে ও পানিশূন্যতা দূর করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান দেহের কোষ রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এছাড়া, কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডাবের পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

হজমশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ডাবের পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম পাকস্থলীর সমস্যা, যেমন ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে কম ক্যালরি ও কম সুগার থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই যারা ডায়েট করছেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পানীয়। এছাড়া, এটি ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টি ত্বকের বলিরেখা ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।

তবে ডাবের পানি পান করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কিডনি রোগীরা এবং যাদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তারা সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া, যেদিন ডাবের পানি পান করবেন, সেদিন পটাশিয়ামসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার কম খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করলে শরীরের খনিজ উপাদানের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, তাই প্রতিদিন ১-২ গ্লাসের বেশি না খাওয়াই উত্তম।

এই গরমে একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন এক গ্লাস ডাবের পানি পান করতে পারেন, যা তাকে সারাদিন সুস্থ, সতেজ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে।


সর্বশেষ সংবাদ